রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার মূল্যবান কাঠ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা যায়, ওইসব কাঠ প্রতিনিয়ত অবাধে পাচার করা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের অধীন বাঘাইহাট রেঞ্জ দিয়ে। পাচারে বন বিভাগের ওই রেঞ্জের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সেনা সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৮ অক্টোবর পরিচালিত এক অভিযানে অবৈধভাবে পাচারকালে প্রায় কোটি টাকার কাঠ আটক করেন বাঘাইহাট জোনের সেনা সদস্যরা। জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দারের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়েছে।বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার জানান, তার নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী উল্টাছড়ি নামক এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির গোলকাঠ আটক করে বন বিভাগের বাঘাইহাট রেঞ্জে সোপর্দ করা হয়েছে। উদ্ধার করা কাঠের পরিমাণ ১০৩৬ ঘনফুট। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাঘাইহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মিয়াজী বিষয়টি স্বীকার করলেও বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, সেনাবাহিনী সদস্যদের আটক করা কাঠগুলো হস্তান্তরের পর রেঞ্জে স্তুপ করে মজুত রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে হাতে সময় নেই। তথ্য জানতে হলে বাঘাইহাট আসতে পারেন। পরে আটক কাঠের পরিমাণ ১১৩৯ ঘনফুট বলে জানান তিনি।প্রাপ্ত তথ্য মতে, পাচার হওয়া কাঠের মধ্যে রয়েছে সেগুন, চাপালিশ, গামার, কড়ই, গোদা ইত্যাদি মূল্যবান প্রজাতির কাঠ। প্রতিনিয়িত কাঠ নিধনের ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনভূমি। এতে ন্যাড়া হয়ে গেছে ওই এলাকার সিংহভাগ বনাঞ্চল। সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পাচারে জড়িত থাকায় অবৈধভাবে নিধন ও পাচার করা হলেও সেগুলো আটক ও উদ্ধারে কোনো অভিযান পরিচালনা করেন না তারা। তবে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের নজরে পড়ে অনেক সময় বিপুল পরিমাণ কাঠ আটক ও উদ্ধার করেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতেও প্রায় সময় পরিচালিত অভিযানে বিপুল পরিমাণ কাঠ আটক করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের বাঘাইহাট রেঞ্জে সোপর্দ করেন সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলোর দেয়া তথ্যমতে, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মিয়াজী কাঠ পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তার যোগসাজশে অবাধে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট মূল্যবান কাঠ। এতে করে ইতোমধ্যে অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন ওই রেঞ্জ কর্মকর্তা। কিন্তু বন বিভাগের লোকজন ফাঁকি দেয়ায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে স্থানীয় অনেকে নিশ্চিত করে জানান, ওই এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পাচারকালে অবৈধ কাঠ আটক করে রেঞ্জে সোপর্দ করলেও পরে সেগুলো সরিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মিয়াজী ও অন্য কর্মচারীরা। ফলে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে সরকারের বিপুল পিরমাণ রাজস্ব। সঠিক তদন্তে বিষয়টির আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। সুশীল প্রসাদ চাকমা/এসএস/পিআর
Advertisement