সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীতে অসময়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে উপজেলার কৈজুরি, খুকনি ও জালালপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা করোনা আতঙ্কের চেয়েও বাড়িঘর হারানোর আতঙ্কে এখন দিশেহারা।
Advertisement
গত এক সপ্তাহে ১০ গ্রামের ২০টি বাড়িঘর, ২০০ বিঘা ফসলি জমি ও শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে আরও আতঙ্ক বেড়ে গেছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ভাঙনে এসব গ্রামের চার শতাধিক বাড়িঘর, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, দুটি মসজিদ, দুটি ঈদগাহ মাঠ, ৫০টি তাঁত কারখানা, ৪০০ বিঘা আবাদি জমি, তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, মাদরাসা, কবরস্থান, শ্মশান ঘাট, মন্দির ও দুই শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
গত এক সপ্তাহে ১০ গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়িঘর, ২০০ বিঘা ফসলি জমি ও শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাকুরতলা, পুঁটিপাড়া, বাঐখোলা, ঘাটাবাড়ি, ভেকা, জালালপুর, চিলাপাড়া ও হাট পাচিল।
Advertisement
এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘরবাড়ি, তাঁত কারখানা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গ্রামবাসীরা জানান, গত বছরের বন্যায় এলাকার প্রায় চার শতাধিক বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় চার শতাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। এ বছর সবেমাত্র নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর এখনও তিন মাস বাকি। অথচ এরই মধ্যে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন তারা।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমরা করোনার আতঙ্কের চেয়ে বাড়িঘর হারানোর আতঙ্কে বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গত চার বছর ধরে মিছিল-মিটিং ও মানববন্ধন করেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে আমরা এখন প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।
খুকনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া, জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ ও কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে অসময়ে ভাঙন নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যে পরিমাণ ভাঙন শুরু হয়েছে এখানকার মানুষ করোনা আতঙ্কের চেয়ে নদী ভাঙনে বাড়িঘর হারানোর আতঙ্কে বেশি দিশেহারা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। স্থায়ী তীর সংরক্ষরণ বাঁধ নির্মাণকাজ কবে শুরু হবে- সেই অপেক্ষায় থাকলে এসব গ্রাম থাকবে না। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
Advertisement
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, অচিরেই এখানকার ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানকার ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকায় তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ, চর ড্রেজিং ও নদী শাসন রয়েছে। প্রস্তাবটি প্রি-একনেকে খসড়া আকারে অনুমোদন হয়েছে। এখন একনেকে পাস হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হবে। এ বছর বর্ষার আগে ভাঙন ঠেকাতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বালুর বস্তা ফেলের কাজ শুরু হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/এমকেএইচ