ফিচার

করোনা: ঘরে ফিরে যে কাজগুলো আগে করবেন

করোনাভাইরাস সংক্রমণে পুরো পৃথিবীই এখন বিপর্যস্ত। সামাজিক দূরত্বই এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ জন্য এখন সবাইকে যথাসম্ভব বাড়িতেই থাকতে বলা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও অনেকটা গৃহবন্দি। কিন্তু যে বাসা-বাড়িতে অবস্থান করা হচ্ছে, তা কি ঝুঁকিমুক্ত? এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে বাসা-বাড়িও ঝুঁকিমুক্ত রাখা যায়।

Advertisement

পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্ত করা: বাড়িতে সবাইকে নিয়মিত হাত ধুয়ে পরিষ্কার করার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। প্রতিবার খাবার রান্না বা প্রস্তুতের আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, বাইরে থেকে বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সাবান-পানি না পাওয়া গেলে হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া দরজার হাতল, নব, সিটকিনি, টেলিফোন, রিমোট, মোবাইল, লিফটের বাটন, ইলেক্ট্রিক সুইচসহ যেসব বস্তু বারবার ব্যবহৃত হয়, সেগুলোও নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা জরুরি।

বাড়ির মেঝে এবং অন্যান্য তল পরিষ্কার রাখার দুটি ধাপ আছে। একটি হলো ক্লিনিং বা পরিচ্ছন্ন করা, আরেকটি হলো ডিজইনফেকটিং বা জীবাণুনাশ করা। প্রথমে পানি, ডিটারজেন্ট বা ফ্লোর ক্লিনার জাতীয় উপাদান দিয়ে মেঝে, তল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। এরপর জীবাণুনাশক উপাদান দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুনাশক হিসেবে ব্লিচিং বা ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলের মিশ্রণ কার্যকর।

বাড়িতে ব্লিচিং মিশ্রণ তৈরি করতে এক গ্যালন পানিতে ৫ টেবিল চামচ ব্লিচ মেশাতে হবে। প্রতিদিন কয়েকবার এভাবে রান্নাঘর, বাথরুম ও অন্যান্য ঘরের মেঝে, যেকোনো তল (যেমন থালা-বাসন ধোয়ার জায়গা, সিঁড়িঘর, বারান্দা, টেবিল, রান্নাঘরের কেবিনেট টপ, সিঙ্কের আশপাশ ইত্যাদি) পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার আগে অবশ্যই হাতে গ্লাভস পরে নেওয়া জরুরি। আর কাজ শেষে সেটা ফেলে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কার্পেট, মাদুর, ম্যাট ইত্যাদি জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে।

Advertisement

বাড়ির প্রতিটি ঘরে টিস্যু পেপার বা কিচেন রোল রাখুন, যাতে কাশি বা হাঁচির সময় হাত বাড়ালেই টিস্যু পাওয়া যায়। টিস্যু বা ময়লা ফেলার পাত্রটি ঢাকনাযুক্ত হলে ভালো। কাঁচা মাছ-মাংসের বর্জ্য একটি পলিথিনে মুড়ে মুখ আটকে বিনে ফেলুন। এরপর অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ঘঁষে পরিষ্কার করুন। রান্না আর কাটা-ছেঁড়ার কাজে ব্যবহৃত বোর্ড, ছুরি, বটি সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখুন।

ঘরে ফিরে যা করা উচিত: নানা কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। যেমন- বাজার করা, ওষুধ কেনা ইত্যাদি। তাছাড়া বাড়িতে বাইরের লোক, যেমন গৃহকর্মীর যাতায়াতও থাকতে পারে। বাইরে থেকে ফিরে যেকোনো বস্তু স্পর্শ করার আগেই হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এর আগে বাসার কোন কিছু না ধরাই শ্রেয়। কারণ এ হাত দিয়ে যা কিছু ধরা হবে, সেখানেই করোনাভাইরাস থেকে যেতে পারে।

বাইরে পরে যাওয়া জামা-কাপড় দ্রুত বদলে ফেলা জরুরি। অতিথির সঙ্গে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকুন। বাইরের যেকোনো পার্সেল, প্যাকেট বা অন্য কিছু হাতে নেওয়ার পর হাত ধুয়ে ফেলবেন। প্রবেশের মুখেই সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা যায়। হাত ধুয়ে ফেলার পাশাপাশি বাইরে থেকে ফিরেই মোবাইল, মানিব্যাগ, জুতা, চশমা, ঘড়ি ইত্যাদি যেসব দ্রব্যাদি সাথে বহন করা হয়, তা জীবাণুমুক্ত করুন।

সাবান, স্যানিটাইজার অথবা ব্লিচিং মিশ্রণ সরাসরি স্প্রে করে অথবা পরিষ্কার কাপড়ে লাগিয়ে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এসব নিয়ম-কানুন মেনে চললে ভাইরাসটির বিস্তার অনেকাংশেই প্রতিহত করা সম্ভব।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম