করোনাভাইরাস প্রতিদিনই নতুন নতুন রূপে বিশ্বব্যাপী ডানা মেলছে। বাংলাদেশেও করোনা তার প্রাণঘাতী রূপ দেখাতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা লকডাউন হচ্ছে। বাড়ছে আক্রান্তের পরিমাণ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন আক্রান্তের খবরের সঙ্গে আতঙ্কও নতুন রূপে ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীসহ বিভিন্নস্থানে লকডাউনের পাশাপাশি এলাকাবাসীও সতর্ক হয়ে উঠেছে।
Advertisement
সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক লড়াই শুরু করেছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন টেস্ট হচ্ছে। বেড়েছে টেস্টের পরিধি ও পরিমাণ। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য সরকারি ছুটি চতুর্থ দফায় বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। তারপরও কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।
১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮২ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। পর্যায়ক্রমে টেস্টের পরিমাণ ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের সংখ্যা। তবে বাংলাদেশে সুস্থতার পরিমাণ এখন পর্যন্ত কম মনে হচ্ছে। সেটি হয়তো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার কারণে হতে পারে। কারণ সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই ব্রিফিংয়ে জানানো হচ্ছে। আর সুস্থ হতে ১৪ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে যারা সুস্থ হচ্ছেন তাদের হাসপাতালে ভর্তির সময়কাল এবং ক’দিন পরে সুস্থ হলেন সেটি আরও স্পষ্ট করা হলে মানুষ স্বস্তি পেত।
করোনার এই মহাআতঙ্কে দেশের মানুষের মাঝে সন্দেহের বীজও উপ্ত হয়েছে পাকাপোক্তভাবে। ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট না হওয়ায়, আক্রান্ত বা অনাক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় মানুষে মানুষে অবিশ্বাস ও সন্দেহ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। করোনা মোকাবিলায় সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য সব পদক্ষেপ নিলেও এ ক্ষেত্রটিতে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি। তারপরও সরকারের প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ সাধুবাদযোগ্য।
Advertisement
তবে যেভাবে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছে তার সঠিক রূপটি নিশ্চিত হতে হলে এই মুহূর্তে টেস্ট বা পরীক্ষার পরিধি আরও বাড়ানো দরকার। যেহেতু শুরুর দিকে করোনা প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের কিছু ঘাটতি ও গা-ছাড়া ভাব ছিল সেহেতু এখন পরিপূর্ণ গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠা খুব প্রয়োজন। সে জন্য যেসব এলাকা বা বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে সেসব এলাকা বা বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে রক্তের স্যাম্পল সংগ্রহ করতে পারেন।
বিশেষ করে যে বাড়ি বা পরিবারে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাবে সে বাড়ি বা পরিবারের সবাইকে টেস্টের আওতায় আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু সঙ্গত কারণে বিভিন্ন বাড়ি, মহল্লা ও পাড়া লকডাউন হচ্ছে, সেহেতু টেস্টের আওতায় যারা আসবেন তাদের ঘর বা এলাকা থেকেই স্যাম্পল কালেকশন করাটাই হবে নিরাপদ। এর ফলে মানুষের মনে থাকা আতঙ্ক ও সন্দেহ অনেকটা লাঘব হবে।
আমরা সবাই জানি, করোনাভাইরাস মোকাবিলার কোনো কার্যকর প্রতিষেধক বা ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। সে জন্য বারবার হাতধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকা ও হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এর ফলে যথেষ্ট উপকারও হচ্ছে। সেইসঙ্গে যদি স্যাম্পল কালেকশনের পদ্ধতি ও পরিধি আরও বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা দিত।
শুধু সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের ওপর জোর না দিয়ে আজই এখন থেকে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহের কাজটি করা যায় কিনা ভেবে দেখতে পারেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য দিনের পর দিন মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারবে কিনা সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।
Advertisement
লেখক : বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক যায়যায়দিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
এইচআর/বিএ/পিআর