ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় আফরোজা খাতুন (১০) নামে এক শিশু আত্মহত্যা করেছে।
Advertisement
শুক্রবার বিকেলে কামারপাড়া ওয়াপদা বাঁধের নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে সে আত্মহত্যা করে। খাবারের অভাবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আফরোজার বাবা আলম শেখ পেশায় তাঁত শ্রমিক। থাকেন কামারপাড়া ওয়াপদা বাঁধে। দুস্থ পরিবারটির সন্তান আফরোজা আত্মহত্যা করেছে মূলত ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে। শুক্রবার বিকেলে সে কয়েক দফা খাবার চেয়েছে বাবার কাছে। কিন্তু খাবারের বদলে ধমক শুনতে হয়েছে শিশুকে। বেশ কয়েকদিন ধরে অনাহারে রয়েছে পরিবারটি। খাবারের জন্য কান্নাকাটি করায় বাবা ধমক দেন আফরোজাকে। তারপরই ঘটে আত্মহত্যার ঘটনা।
স্বজনদের দাবি, তাঁত শ্রমিক আলম শেখের কারখানা বন্ধ ১০ দিন। জমা টাকায় ৪-৫ দিন সংসার চললেও গত কয়েকদিন কার্যত অনাহারে ছিলেন শিশুসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময়ে আলম পাননি সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তা। কেউই খোঁজ নেয়নি তার। আফরোজার মৃত্যুর পর অনেকে এসেছেন বাড়িতে। পৌর মেয়র শনিবার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ওয়াপদা বাঁধে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। জনপ্রতিনিধিরা তাদের অনেকের আইডি কার্ড নিয়ে গেলেও ত্রাণ সহায়তা মেলেনি।
Advertisement
আলম শেখ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রশাসন কড়াকড়ি করছে। তাই ১০ দিন ধরে কাজ করতে পারছি না। ঘরেই শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি। হাতে টাকা নেই। তাই চাল-ডাল কিনতে পারিনি। ঘরে খাবার নেই বলে মেয়ে কান্নাকাটি করছিল। আমি তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এরপর মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে।
বেলকুচি পৌরসভার মেয়র আশানুর বিশ্বাস বলেন, কর্মহীন দুস্থ মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য অপর্যাপ্ত। সে কারণে সব মানুষকে একসঙ্গে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন। তবে খাদ্য সহায়তা আরও বাড়ানো দরকার।
বেলকুচি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিশুর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত-ই-জাহান বলেন, প্রথম দফায় পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছিল। তারপরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। শনিবার আবারও পরিবারটিকে ১০ কেজি চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবণ ও আলু দেয়া হয়েছে।
Advertisement
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/এমকেএইচ