জাতীয়

তিন জেলায় নারায়ণগঞ্জফেরত করোনা রোগী, পালানো থেমে নেই

দেশের তিনটি জেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্লাস্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এখনও নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাওয়া থেমে নেই। এদের কেউ কেউ মাইক্রোবাস, রাতের বেলা নৌকা আবার কেউ বা সিএনজি করে পালিয়ে যাচ্ছেন। আর দেশের সর্বত্র করোনা রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি জেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এগুলো হলো- হবিগঞ্জ, লালমনিরহাট ও চাঁদপুর। আর কোথাও কোথাও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের আটকে দেয়া হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জে যাওয়া এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ যাওয়ার পথে চেকপোস্ট থেকে পুলিশ তাকে আটক করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

জানা যায়, শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৯ জন ও বৃহস্পতিবার আসা আরও ১৬ জনকে খুঁজে বের করেছে পুলিশ। তাদের রাখা হয়েছে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। এদের মধ্যে ছয়জন নারী ও বাকিরা পুরুষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ ইমতিয়াজ তুহিন।

Advertisement

অন্যদিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় নারায়ণগঞ্জফেরত একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএম জহিরুল হায়াত। আক্রান্ত হওয়া ওই যুবক (২৬) গত ৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলব উত্তরে যান। তিনি দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর এলাকার আনারপুর গ্রামের বাসিন্দা। এর আগেও একই উপজেলায় একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলব উত্তরে এসেছেন।

এদিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলায় গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়া দহগ্রামে নারায়ণগঞ্জফেরত একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছেন। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন সূত্র জানায়, ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কয়েকদিন আগে বাড়িতে আসেন। এরপর বাড়িতে অসুস্থ হলে তার করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শনিবার বিকেলে ওই যুবকের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে থেমে নেই। পটুয়াখালীর আজগর আলী নামে একজন জাগো নিউজকে বলেন, আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে পটুয়াখালীর দুমকির মৌকরণ বাজারে এক ট্রলারবোঝাই করে মানুষ যায়। এলাকার লোকজন ওই ট্রলারটি আটকে দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাদের হেফাজতে নেয়।

বান্দরবান থেকে ইউ থাই মারমা জয় বলেন, আজও নারায়ণগঞ্জ থেকে দুইজন লামায় এসেছেন।

Advertisement

বরিশালের রুহুল আমিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আজও মানুষ বরিশালের উজিরপুরে এসেছে। প্রশাসন লকডাউন করে রেখেছে।

জামালপুর থেকে মোরশেদ আলাম বলেন, আমাদের জেলার মেলান্দহ থানায় প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক আসছেন।ওদের বের করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী ইব্রাহিম খলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখান থেকে যে মানুষগুলো পালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়, আসলে ওরা নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা না। ওরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে জীবিকার টানে বিভিন্ন জেলা থেকে খাটতে আসে। পেট ভরে গেলে অথবা আপদকালীন নারায়ণগঞ্জকে বাই বাই। আবার সুসময়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে আসবে নাকে ক্ষত দিতে।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলাটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন। করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে কাজের জন্য যান মানুষ। এর বেশির ভাগই পোশাকশ্রমিক। সেখানকার মেয়র আইভী রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জে লকডাউন হয়েছে। কিন্তু পাড়ায়-মহল্লায় মানুষ এখনো হাঁটাহাঁটি করে। সচেতনতার অভাব আছে। নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্রতিটি মহল্লায় প্রচুর মানুষ। তারা যদি না শোনে, তাহলে তো সর্বত্রগামী হয়ে তাদের পক্ষে ভূমিকা রাখা কঠিন হবে।

ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে মেয়র কারফিউ জারির দাবি করলেও লকডাউন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ।

এইচএস/বিএ/এমকেএইচ