আন্তর্জাতিক

এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনায় মৃত্যু দ্বিগুণ

একটি সুসংবাদের আশায় এখন সারা বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছে, ‘মৃতের সংখ্যা কমে আসছে’। হায়! এই কথাটা লেখা তো দূরে থাক, চিন্তাই যেন করা যাচ্ছে না। কারণ প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, যা শেষ এক সপ্তাহে হয়েছে দ্বিগুণ।

Advertisement

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ৩ এপ্রিল সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে উহানে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিন মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৫০ হাজার মানুষের। কিন্তু পরে এক সপ্তাহেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। বরাবর এক সপ্তাহের ব্যবধানে, ১০ এপ্রিল মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক লাখ।

মৃত্যুর এই পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি দিনের পর দিন কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন প্রতি দিনই কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষে মারা যাচ্ছে। কখনো সেটা ৭ থেকে ৮ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৩ মার্চ জাগো নিউজেই সংবাদ প্রচার হয়েছিল মৃত্যু ৫ হাজার ছাড়ালো। ২২ মার্চ মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার। ২৩ মার্চ লেখা হলো মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৬ হাজার

Advertisement

জ্যামিতিক হারে এরপর কীভাবে মৃত্যু বেড়েছে, সেটা লক্ষ্য করলেই শিউরে উঠতে বাধ্য যে কেউ। ৩ এপ্রিল রাতেই মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। ৪ এপ্রিল মৃত্যু ৬০ হাজার ছাড়ালো। এরপর ৭ এপ্রিল লেখা হলো মৃত্যুর সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৫ হাজার। পরদিনই লিখতে হয়েছিল মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ৮১ হাজার

শেষ পর্যন্ত ১০ এপ্রিল রাতে ৫০ হাজার মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর ১ লাখ ছাড়িয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ পর কি লিখতে হবে, আল্লাহই জানেন। কিন্তু পরিস্থিতি একের পর এক খারাপের দিকেই যাচ্ছে। কোথাও কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

ওয়ার্ল্ডোমিটারে করোনা আপডেটে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, কত দ্রুত আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক সেকেন্ড পরপর পরিবর্তন হচ্ছে এই সংখ্যা। সর্বশেষ আপডেট (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেছে ১৭ লাখ (১৭ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮জন)। মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৫১২। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৭৩।

চীনের মূল ভূখণ্ড উহানে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। শুরুর দিকে শুধু উহানেই সীমাবদ্ধ ছিল ভাইরাসটির বিস্তার। ধীরে ধীরে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ইরানে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। ইরানে তাণ্ডব চালাতে চালাতেই ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইতালিতে শুরু হয় করোনার প্রকোপ।

Advertisement

মার্চের শুরুর দিকেই ইতালিতে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। এরপর ইউরোপের বাকি দেশগুলো- স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এর উপস্থিতি বাড়তে থাকে আটলান্টিকের ওপারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত ৫ লাখ ছাড়িয়েছে (৫ লাখ ৩ হাজার ১৭৭জন)। মৃত্যু ১৮ হাজার ৭৬১। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও দ্বিতীয় স্থানে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৮৪৯ জনের।

মৃতের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে স্পেন। ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩ জন আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭০ জনের। ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ২২১ জনের। আক্রান্ত ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৯। জার্মানিতে আক্রান্ত বেশি, মৃত্যু কম। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৬২৪। মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬০৭ জনের।

যুক্তরাজ্যেও মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে ৯৮০ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৯৫৮। ইরানে আক্রান্ত ৬৮ হাজার ১৯২। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ২৩২ জনের। বেলজিয়ামে মৃত্যু ৩ হাজার ৩৪৬। নেদারল্যান্ডসে মৃত্যু হয়েছে ২৫১১ জনের।

এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮ জনের মধ্যে মৃত্যু এবং সুস্থজনিত কারণে ভাইরাস থেক মুক্তি পেয়েছে মোট ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৫ জন। এখনও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিংবা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১২ লাখ ২৫ হাজার ২১৩ ব্যক্তি। এদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৯১৩ জন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বাকি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩০০ জন ঝুঁকিমুক্ত।

আইএইচএস/