করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কার্যত লকডাউন ঢাকা। দেশের বিভিন্ন স্থান নতুন করে লকডাউন হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া ও কর্মজীবী মানুষ। তবে অন্যের ওপর নির্ভর করে যাদের অনেকের জীবিকা সেই হিজড়ারা পড়েছেন বড় বিপাকে।
Advertisement
করোনার এই দুর্যোগকালে জীবিকা নিশ্চয়তায় সরকারি সহযোগিতা, অনুদান চান তারা। তাদের অনেকেই কর্মদক্ষ পেশাজীবী জীবনযাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমনিতেই হিজড়ারা কর্মহীন, তার ওপর লকডাউন ঘোষণায় তারা যেন কারাগারে বন্দি। তাছাড়া তাদের মাঝে অনেকেই ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসতে চান না। তাই দিনমজুর, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্তদের চেয়ে হিজড়াদের কষ্ট অনেক বেশি হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আড়াইশ হিজড়া করোনার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদের মধ্যে মিরপুর ৩নং বিল্ডিং এলাকায় রয়েছেন ১০৫ হিজড়া, জুটপট্টি এলাকায় ৩৫, বেনারসি পল্লীতে ১৭, মিরপুর-১১ বাজার এলাকায় ১১, কালশী এলাকায় ২৮ ও রাইনখোলা এলাকায় ৫৬ জন।
Advertisement
লকডাউনের এ সময়ে হিজড়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পাথওয়ে’। পাথওয়ে'র মাধ্যমে দিনের দুপুরের খাবার পাচ্ছেন তারা। বৈশ্বিক এ মহামারিতে হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেছে সংগঠনটিও।
মানবিক বিবেচনায় সরকারি সহায়তাসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও সংস্থার কাছে সহযোগিতা চান হিজড়ারা।
তাদের অভিযোগ, সম্প্রদায়ের জীবন-সংস্কৃতিভিত্তি অঙ্গভঙ্গিসহ নানা কৌশলে মানুষের কাছ থেকে তারা প্রতিদিনের রোজগার করতেন। বর্তমান লকডাউনে তারা ঘরবন্দি। এ অবস্থায় পড়েছেন খাদ্য সংকটে। তবে তাদের কষ্ট সাধারণদের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ ইতোমধ্যে সাধারণ দরিদ্র, অসহায় ও মধ্যবিত্তদের মাঝে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সরকারি সহায়তা এসেছে। কিন্তু মিরপুরে হিজড়াদের মাঝে এ পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা আসেনি।
মিরপুর ৩ নং বিল্ডিং এলাকায় বসবাসরত সানু হিজড়া বলেন, সমাজের লাঞ্ছনায় ৯-১০ বছর বয়স হতেই পরিবার থেকে আলাদা হতে হয় হিজড়াদের। তখন থেকেই সবার জীবনে নেমে আসে কষ্ট। আমাদের সবাইকে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। ভাড়াও বাড়ছে দিন দিন, কিন্তু রোজগার কমছে।
Advertisement
লকডাউনের এই সময়ে পাথওয়ে গত ৮-৯ দিন শুধু এক বেলার খাবার দিয়েছে। এর আগে অল্প কিছু হিজড়াকে হাবিব নামে একজন খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। শুক্রবার থেকে পাথওয়ে খাবার দেয়া বন্ধ করেছে। এখন কোনো প্রকার সহায়তা আমরা পাচ্ছেন না বলে জানান সানুু।
মিরপুর কালশী এলাকায় বসবাসরত সূচনা হিজড়া বলেন, করোনা আতঙ্কে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলেও আমাদের কেউ সাহায্য করছে না। পাথওয়ে যে একবেলার খাবার দিতো তাও বন্ধ। আমাদের আয় বন্ধের কারণে ঘরভাড়া দিতে পারছি না। এখন আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন একটু তাকান।
যোগাযোগ করা হলে পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় দরিদ্র-অসহায় কর্মহীন মানুষ ও হিজড়াদের মাঝে খাবার বিতরণ শুরু করে পাথওয়ে। এটা করতে গিয়ে দেখছি বেশি কষ্টে আছে হিজড়া সম্প্রদায়।
তিনি বলেন, দরিদ্র-অসহায়দের মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছলেও হিজড়া সম্প্রদায় এখনও বঞ্চিত। তাদের দিকে অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পৌঁছানো জরুরি। বরাবরই পাথওয়ে তাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। ইতোমধ্যে পাথওয়ে একবেলা করে খাবার দিয়েছে হিজরা সম্প্রদায়কে, যা আবারও শুরু হবে।
মো. শাহিন বলেন, হাত পেতে রোজগার থেকে বেরিয়ে স্বাবলম্বী করতে হিজড়াদের জন্য ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাথওয়ে ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল।
জেইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ