বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে সমন্বয়হীনতার কথা বছরের পর বছর শুনে এসেছে নগরবাসী। এটিকে তারা এখন নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছে। দেশব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও চট্টগ্রামের দায়িত্বশীলদের এখন লেজেগোবরে অবস্থা। প্রতি মুহূর্তে ভয়ালরূপে আবির্ভূত হতে থাকা করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রামে আলাদা তিনটি কমিটি থাকলেও কারও জানা নেই এই পরিস্থিতি তারা কীভাবে সামলাবেন আর নগরের লকডাউনেরই বা কী হবে?
Advertisement
প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকার চতুর্থ দফায় ছুটি বাড়ালেও ইতোমধ্যে ঢিলেঢালা লকডাউনের ফাঁক গলে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকার লোকজন। গত সপ্তাহের শেষ থেকে প্রতিদিন বন্দরনগরীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এরই মধ্যে নগরের ১৬টি থানা এলাকার ছয়টিতে সাতজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও মহামারি আক্রান্ত এই মহানগরে নতুন প্রবেশ যেমন বন্ধ নেই, তেমনি নগর ছেড়ে উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলোতে পালিয়ে যাওয়ার মানুষের স্রোত কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশের পাঁচটি পথই বন্ধ করে দেয়ার দাবি করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে দায়সারা সেই ঘোষণা আমলেই নেয়নি নগরবাসী। প্রতিদিনই হাজারো মানুষ বন্দরনগরী ছাড়ছেন করোনা ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি নিয়েই।
চট্টগ্রাম নগরের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ?
Advertisement
বন্দরনগরীতে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় রোগী শনাক্ত হয় চকবাজার থানার দামপাড়ায়। দ্বিতীয় দফায় হালিশহর, পাহাড়তলী থানার সাগরিকা ও সীতাকুণ্ড পৌর এলাকায় তিনজন। গতকাল তৃতীয় দফায় নতুন করে কোতোয়ালি থানার ফিরিঙ্গিবাজার ও আকবরশাহ থানায় ইস্পাহানী গেট ঝোলারহাট এলাকার দুজন। অর্থাৎ নগরের ১৬টি থানার ৬টি থানা এলাকায়ই করোনা রোগী পাওয়া গেছে।
আক্রান্তদের একজন সুপারশপের বিক্রয় প্রতিনিধি, একজন সবজি বিক্রেতা, একজন কাঠ ব্যবসায়ী, একজন ব্যাংকার, একজন পোশাক শ্রমিক, একজন বৃদ্ধ ও একজন গৃহবধূ। এদের তিনজনের বয়স ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে, তিনজনের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ও অপরজন ৬০ বছর বয়সী।
উপরের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, প্রতি মুহূর্তেই করোনার সামাজিক সংক্রমণের সংখ্যা, মাত্রা, পরিমাণ, পরিধি বাড়ছে। চট্টগ্রামে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন বাদে আর কারও বিদেশ প্রত্যাগতদের সংস্পর্শে আসার ইতিহাস নেই। সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্তরের, ভিন্ন ভিন্ন বয়সের ও ভিন্ন ভিন্ন পেশার লোকজন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার মানে হলো চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে এবং সামাজিক সংক্রমণের এই বিস্তার দ্রুতই ঘটছে।
নগরের ১৬টি থানার এমন চারজন ব্যক্তিকে করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে যারা এর আগে হয়তো এই নগরের কয়েক হাজার মানুষর সংস্পর্শে গেছেন। বিশেষ করে সবজি বিক্রেতা, পোশাক শ্রমিক, কাঠ ব্যবসায়ী ও সুপারশপের প্রতিনিধি। এ অবস্থায় ওইসব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা ও কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন একটি অসম্ভব বিষয়।
Advertisement
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বন্দরনগরীতে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শহরের মানুষের গ্রামে ফেরা ঠেকানো না গেলে খুব দ্রুতই চট্টগ্রামের উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাবে, চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে আরও একটি নারায়ণগঞ্জ।’
সর্বশেষ পরিস্থিতি
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) শুক্রবার (১০ এপ্রিল) নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও দুজনকে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। নতুন যে দুজন করোনায় আক্রন্ত হয়েছেন তাদের বাড়ি নগরের কোতোয়ালি থানার ফিরিঙ্গি বাজার এলাকার একটি ১১ তলা ভবন ও আকবরশাহ থানায় ইস্পাহানী গেট গোলপাহাড় এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন করেছে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় থানা পুলিশ।
আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আকবরশাহ থানার গোলপাহাড় এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী একজন সবজি বিক্রেতা। গত চারদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল তার নমুনা পরীক্ষা করে আজ করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়। ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ইস্পাহানী গেট এলাকার ঝোলারঘাট বাজারের সবজি বিক্রেতা। এ কারণে ওই এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি একজন কাঠ ব্যবসায়ী। ১১ তলা একটি ভবনে তারা পরিবার নিয়ে যৌথভাবে বসবাস করছেন। ওই ভবনে মোট ৫৭টি পরিবারের বসবাস। এ অবস্থায় ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি। আল্লাহর ওয়াস্তে সবাইকে ঘরে থাকতে বলুন। নয়তো কেউ বাঁচব না।’
চট্টগ্রামে এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাতজন। এছাড়া সারাদেশে চট্টগ্রামের ১১ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে পাঁচজন করোনা আক্রান্তের ঘটনায় ১৭টি বাড়ি, একটি ব্যাংক লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার নতুন করে একটি ১১ তলা ভবন ও একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২৫ জনের বেশি।
চট্টগ্রাম নগর লকডাউন কেন প্রয়োজন?
পৃথিবীর মানুষ লকডাউনের সঙ্গে পরিচিত হয় চীনের উহান শহরের মাধ্যমে। চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু ওই মাসের ২৩ জানুয়ারি উহান শহর লকডাউন করে চীন সরকার। মূলত ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না যায় সেই লক্ষ্যেই তারা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। লকডাউন চলাকালে উহানের সঙ্গে চীনের মূল ভূখণ্ডের সড়ক, রেল এমনকি আকাশপথ সব বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় শহরের বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, ঘর থেকে বেরনো যাবে না এবং যেকোনো পরিবার থেকে একজন মাত্র সদস্য তিন দিনে একবার বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাবেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনার জন্য- এই রকম কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল।
ব্যাপার-স্যাপার দেখে অনেক বিশেষজ্ঞ কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ওসব চীনেই সম্ভব, গণতান্ত্রিক দেশে নয়। কিন্তু তারপর থেকে গত দু’মাসে পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তে ওই লকডাউনই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে করোনার বিরুদ্ধে। যারা যত কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করতে পারছেন, তারা তত প্রশংসা পাচ্ছেন এখন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস যে গতিতে এগুচ্ছে, তাতে উহানের মতো চরম সিদ্ধান্ত নেয়া না গেলে চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশকে করোনা থেকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব।
করোনা ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি নিয়ে শহর ছাড়ছে নগরবাসী
গত ৫ এপ্রিল করোনা ঠেকাতে রাজধানী ঢাকাকে পুরো দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় রাজধানীতে প্রবেশের প্রধান প্রধান সড়কগুলোর প্রবেশপথ এমনকি এই সড়কপথের ফেরি পারাপারও। একদিন পর রাত ১০টা থেকে চট্টগ্রামের পাঁচটি প্রবেশপথ বন্ধের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। কিন্তু জাগো নিউজের নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে অঘোষিত ওই লকডাউন সেই ঘোষণা পর্যন্তই। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত নগরের এই পাঁচটি সড়কসহ কর্ণফুলী নদীর ১৫টি ঘাট দিয়ে হাজারো মানুষ পরিবার নিয়ে শহর ছাড়ছে। হয়তো সঙ্গে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাসও।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে নগরের অক্সিজেন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রীতিমতো হাট বসিয়ে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে সিএনজি অটোরিকশাগুলো। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও উত্তর চট্টগ্রামের এই বাসস্টেশনে সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ৩০টির মতো সিএনজি অটোরিকশা। এসব গাড়ি যাত্রী নিয়ে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়িসহ যাচ্ছে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার সীমানা এলাকা পর্যন্ত।
মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রবেশপথ বন্ধের দাবি করা হলেও মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে থাকা পুলিশ ফাঁড়িতেও কোনো তৎপরতা দেখা গেল না। অটোরিকশা চালকরা জানালেন, তারা প্রতিদিন এভাবই যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করছেন।
এই সড়কের আমানবাজার এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি চেকপোস্ট বসানো হলেও যাত্রীরা চেকপোস্টের একটু আগে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে সেই বাধা পার হচ্ছেন। ওপারে গিয়েই পুলিশের চোখের সামনেই অপেক্ষমাণ সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে। উপস্থিত দুই পুলিশ সদস্যকে কোনো ধরনের বাধা দিতে দেখা গেল না। উপজেলা প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে রীতিমতো সিএনজি স্টেশন। সেখানেও জেলা পুলিশের কোনো সদস্য দেখা গেল না।
সিএনজিচালক আবছার জাগো নিউজকে বলেন, পরিস্থিতি বদলানোর পর থেকে এভাবেই প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করি। ভোরে রাস্তায় পুলিশ থাকে না তখন অক্সিজেন চলে আসি যাওয়ার সময় ১০-২০ টাকা দিলেই পুলিশ ছেড়ে দেয়। তবে ১২টার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। সে সময় চাইলেও সড়কে গাড়ি চালানো যায় না। ম্যাজিস্ট্রেট-সেনাবাহিনী সমস্যা করে।
এদিকে নগরের কালুরঘাট সেতু ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা দিয়েও প্রতিনিয়ত মানুষ শহর ছাড়ছে। নোয়াপাড়া এলাকার কলেজছাত্র মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন পরিবার গ্রামে আসছে। আশঙ্কা করছি, এখনো করোনা শঙ্কার বাইরে থাকা গ্রামগুলোতে এর মাধ্যমেই মহামারি ছড়িয়ে যাবে। গ্রামের মানুষ ওভাবে সচেতন নয়। একবার রোগটা গ্রামে ছড়িয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যাবে।
বোয়ালখালী উপজেলার সাংবাদিক পুজন সেন জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রবেশপথ বন্ধের কথা বলা হলেও কালুরঘাট সেতুর দুই প্রান্তেই নড়র পুলিশ বা থানা পুলিশের তৎপরতা অতটা শক্ত নয়। ইচ্ছে করলেই যে কেউ শহরে আসতে বা যেতে পারছেন। ইতোমধ্যে নগরের দামপাড়ায় লকডাউন এলাকা থেকে একটি পুরো পরিবার উপজেলার শাকপুরায় অবস্থান করছে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন তাদের বাড়ি লকডাউন করেছে।
এদিকে পটিয়া এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রবিউল জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে প্রবেশের পথ বন্ধের কথা বলা হলেও তা শুধু বলাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বা বিভিন্ন কৌশলে প্রতিদিন মানুষ গ্রামে আসছে। এমনকি লকডাউন ঘোষণা হওয়া নারায়ণগঞ্জ থেকেও সাতজনের অধিক ব্যক্তি পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফিরেছেন। এ কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে করোনাভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, উপজেলার কচুয়াতে ৩ জন, কুসুমপুরে ২ জন, পৌর সদরের ৪ নং ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জ থেকে একজন করে ব্যক্তি ফিরেছেন। এদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জে লকডাউন শুরুর পরেই এসেছেন।
এদিকে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তিও নারায়ণগঞ্জফেরত একজন ব্যাংকার। সীতাকুণ্ড পৌর সদরের গোডাউন পাড়ার এই বাসিন্দার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, করোনা শনাক্ত হওয়ার মাত্র দুইদিন আগেই তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান।
চট্টগ্রাম লকডাউন হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেউ!
চট্টগ্রামে করোনা মোকাবিলায় রয়েছে তিনটি আলাদা কমিটি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, জেলা কমিটির দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন ও বিভাগীয় কমিটির দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। কিন্তু এত সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কেউ বলতে পারছেন না করোনার এই ভয়াল পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম নগর লকডাউন করা হবে কিনা!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর লকডাউন হবে কিনা এ বিষয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আসলে চট্টগ্রাম ছাড়াও আমাকে আরও ১১টা জেলার বিষয়ে দেখতে হয়। মূলত হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনার দিকটা আমি খেয়াল রাখছি। লগডাউনের বিষয়টিতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেখার কথা।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর লকডাউনের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। আর লকডাউন হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেখার কথা। আপনি মেয়র ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে কথা বলুন।’
এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভই করেননি।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে আমাদের দায়িত্বশীলদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বলতে কিছু নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কোনো বিষয়ে বলবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজে থেকে কিছু করার প্রয়োজন অনুভব করেন না। নয়তো একটি নগর প্রতি মুহূর্তে যেখানে করোনার সেন্ট্রাল সেল হেয়ে উঠেছে, সেখানে এখনো কেন তারা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না? কৌশলগত কারণে এই নগরের অভিভাবক সিটি মেয়র। কিন্তু এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জেলা প্রশাসকের প্রধান দায়িত্ব জেলার সুরক্ষা দেয়া। নগর থেকে মানুষ উপজেলায় গেলে কী হবে সেটা নিশ্চয় তিনি বোঝেন। তবুও কারা কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আইন মানানোর দায়িত্ব মেট্রোপলিন পুলিশের, কিন্তু তারা কীভাবে করোনা আক্রান্ত একটি শহরের মানুষকে শহর থেকে বের হয়ে যাওয়া অ্যালাউ করছেন তা কোনোভাবেই বুঝে আসছে না।’
‘করোনার বিস্তার ঠেকাতে এখনই চট্টগ্রাম মহানগরকে পুরোপুরি লকডাউন করতে হবে। এছাড়া লকডাউন চলাকালে শহরের বাসিন্দাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এখনই যদি আমরা লকডাউনে না যাই তাহলে আগামী এক সপ্তাহ পর লকডাউন করার কোনো জায়গা বাকি থাকব না। আর গ্রামে করোনার মতো মহামারি ছড়িয়ে গেলে দেশে কী ঘটবে তা আমি ভাবতেই শিউরে উঠছি।’- বলেন প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া।
আবু আজাদ/বিএ/জেআইএম