ফরিদপুরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাস্তার পাশে সারাদিন কাতরানোর পরও করোনা আতঙ্কে তার কাছে আসেনি কেউ। দীর্ঘসময় পর খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) গভীর রাতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
Advertisement
মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায়। মৃত ওই ব্যক্তির নাম আব্দুস সামাদ মন্ডল (৪৮)। তার বাড়ি যশোরের খাজুরা এলাকায়।
শনিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে আব্দুস সামাদের মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা ছিল। তার স্বজনদের এখনও সন্ধান মেলেনি।
মধুখালী উপজেলার কামারখালী বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, আব্দুস সামাদ মন্ডল কামারখালীতে এসেছিলেন দিনমজুরের কাজ করতে। শুক্রবার জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি একটি ভ্যানযোগে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে করোনা আতঙ্কে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের মাঝিবাড়িতে একটি জুট মিলের সামনে রাস্তার পাশে তাকে ফেলে রেখে যান ভ্যানচালক। অসুস্থ অবস্থায় সারাদিন রাস্তার ওপর পড়ে ছিলেন আব্দুস সামাদ। ওই পথ দিয়ে অনেকেই যাতায়াত করলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি করোনা আক্রান্ত সন্দেহে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় সেখানে যান মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ।
Advertisement
মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, লোকটি ভ্যানযোগে হাসপাতালে আসার পথে করোনা রোগী সন্দেহে পথে ফেলে যান ভ্যানচালক। এরপর রাস্তায় পড়ে ছিলেন তিনি। দীর্ঘসময় এভাবে পড়ে থাকার পর রাত ৯টার দিকে আমরা তাকে ফরিদপুর থেকে আসা বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সযোগে ফমেক হাসপাতালে পাঠাই।
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা মানোয়ার বলেন, ওই ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন বলে তাকে ফমেক হাসপাতালে নেয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে পাঠাই। তবে ফরিদপুর থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্স আসতে অনেক রাত হয়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রেজা বলেন, জ্বরে আক্রান্ত আব্দুস সামাদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সুযোগ ছিল না সতর্কতার কারণে। তাহলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ১৪ দিন সাধারণ রোগী বহন করতে পারতো না।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. জুয়েল বলেন, শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে তাকে মৃত পাই।
Advertisement
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনা সন্দেহে কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি বলে জেনেছি। এজন্য রাস্তায় মারা যান তিনি। এ ব্যাপারে এর বেশি কিছু জানি না আমি।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, রাতেই আমরা ওই মৃত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করি। শনিবার সকালে তার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বি কে সিকদার সজল/এএম/এমকেএইচ