জাতীয়

করোনা আতঙ্ক : স্বাভাবিক মৃত্যুতেও জানাজা-দাফনে লোক নেই

রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ থানা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা লিয়াকত আলী (ছদ্মনাম)। এলাকাতে তিনি একজন সৎ, পরোপকারী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার। এলাকার মসজিদ থেকে মাইকে তার মৃত্যুসংবাদ প্রচার করে রাত ১০টায় জানাজা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

Advertisement

লিয়াকত আলীর ছেলে জাগো নিউজকে জানান, তার বাবার জানাজায় আত্মীয়-স্বজনসহ হাতেগোনা জনা ত্রিশেক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তার বাবা মারা গেলে এলাকার শতশত মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করতেন। তার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও করোনা আতঙ্কের কারণে উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য।

গ্রামের বাড়ি ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই জানাজায় অংশগ্রহণ করতে এলে রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপদস্থ হতে পারেন-এ আশঙ্কায় আসেননি। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে তিনি তা মেনে নিয়েছেন এবং কারও প্রতি এ বিষয়ে তার রাগ-অনুরাগ নেই বলে জানান।

তবে তিনি যখন এ কথা বলছিলেন তখন তার চোখেমুখে অব্যক্ত এক যন্ত্রণা ফুটে উঠতে দেখা যায়। এমন অব্যক্ত যন্ত্রণা শুধু লিয়াকত আলীর সন্তানের একার নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে সম্প্রতি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারী অনেকের সন্তানেরই।

Advertisement

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে নগরবাসিন্দাদের অনেকেই স্বজনের জানাজায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু জেনেও শুধু আতঙ্কে জানাজায় অংশগ্রহণ এড়িয়ে যাচ্ছেন। যারা অংশগ্রহণ করছেন তারাও নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে তবেই অংশগ্রহণ করছেন।

জানাজায় অংশগ্রহণকারী স্বজনদের অধিকাংশ আগে লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানে গেলেও এখন কবরস্থানে দাফনের লোকও কমে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার কারণে কবরস্থানগুলোতেও লাশ দাফনের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একজন জানান, গত তিনমাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে দাফনকৃত মৃতদেহের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নগরবাসিন্দাদের অনেকে গ্রামে চলে যাওয়ায় হয়তো লাশের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে ওই ব্যক্তি মনে করেন।

Advertisement

তবে লাশ দাফন কমেছে বলে বলে মনে করেন না এ কবরস্থানের মোহরার হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আজিমপুর কবরস্থানে আগেও গড়ে ৬০০ লাশ দাফন হতো এখনও হচ্ছে। তবে বর্তমানে লাশের সঙ্গে আসা স্বজনদের সংখ্যা বহুলাংশে কমেছে।

তিনি বলেন, আগে কোনো মৃতদেহের জানাজায় যারা অংশগ্রহণ করতেন তাদের বেশিরভাগই লাশটি দাফনের জন্য কবরস্থানে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে জানাজাতেও লোক কম হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবে কবরস্থানে দাফন করতে আসা লোকজনের উপস্থিতিও কমে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এসআর/পিআর