করোনায় মৃত্যুবরণ করা বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম দেলোয়ারের বাড়ি লকডাউনের নির্দেশ থাকলেও সেটা মানছে না কেউ। মৃতদেহ দেখতে যান শত শত স্বজনসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তার জানাজায় অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এমনকি সেখানে অংশগ্রহণ করেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক রাজনৈতিক নেতাও।
Advertisement
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক এলাকাবাসী বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা জিএম দেলোয়ার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার। তিনি স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ। এসব জেনেশুনেই বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আওয়ামী লীগ নেতা জিএম দেলোয়ারের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার নমুনা প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত বাড়ি লকডাউনের নির্দেশ দেন। অথচ সেই লকডাউন উপেক্ষা করে মৃতদেহ দেখতে সেখানে ভিড় করে শত শত মানুষ। এমনকি হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মরহুমের জানজার নামাজ। এতে উপস্থিত জনতার করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমতলী উপজেলার সঙ্গে পুরো বরগুনা জেলাই এখন ঝুঁকির মুখে।
তার মৃত্যুর বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ূন শাহিন খান জানান, ‘জিএম দেলোয়ার সাহেব পটুয়াখালী হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। সেখান থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং সাইন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ’এ পাঠানো হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার টেস্ট রিপোর্টটি পাঠানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। ইতোমধ্যে সে রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে রিপোর্টে পাওয়া গেছে।’
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি লকডাউন কার্যকর করতে। তারপরও বেশ কিছু লোকজন হয়েছে। সীমিত আকারে জানাজা হয়েছে। এখন আমরা পুরো উপজেলা লকডাউন করে দিয়েছি।
Advertisement
এ বিষয়ে নৌ-বাহিনীর কমান্ডার যুবায়ের বলেন, সেখানে যাতে লোকসমাগম না হয় সে বিষয়ে আমাদের ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনকি আমতলী থানার পক্ষ থেকেও মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সাধারণ জনগণ তা শোনেননি।
তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণ সচেতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ অভিযান সফল করা সম্ভব হবে না।
কমান্ডার যুবায়ের আরও বলেন, বিষয়টি অনুধাবন করে তিনি বরগুনার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন যাতে পুরোপুরি আমতলী উপজেলাকে লকডাউন করা হয়।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আমাদের অফিসাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তারা মাইকিং করেছেন। কিন্তু তাদের বাধার মুখেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ বিষয়ে এককভাবে উপজেলা প্রশাসনকে দায়ী করা যাবে না। কারণ জনগণ সচেতন না হলে শুধু প্রশাসনের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আমতলী সদর ইউনিয়নের লোচা গ্রামের নিজ বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জিএম দেলোয়ার। এর আগে গত ৮-১০ দিন ধরে তিনি জ্বরসহ করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এফএ/পিআর