শব্দ-ছন্দে মিললে তবেই কবিতা হয়। কিন্তু কবিতার জীবনের ছন্দ শেষ পর্যন্ত মিললো না। দৃর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে থেমে গেল তার জীবনের ছন্দ। জীবন সব সময় সরল পথে চলে না। কিন্তু তাই বলে এতোটা! কী দোষ করেছিল স্কুল পড়ুয়া কবিতা রানী দাস। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বিজয় সরণি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা রানী দাসকে হত্যা করা হয়। বিদ্যালয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে দুপুর পৌনে ১টার দিকে স্কুলেগেটে পৌঁছায় সে। স্কুলগেটে ওৎ পেতে থাকা বিক্রম দাস নামক এক দৃর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হয় সে। এরপর হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার জীবন প্রদীপ নিভে যায় চিরতরে। আর সেই সঙ্গে অপমৃত্যু ঘটে একটি পরিবারের স্বপ্নের। শান্তশিষ্ট কবিতার ধ্যান-জ্ঞান ছিল লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে সে। লেখাপড়া ছাড়া অন্যদিকে কোনো মনোযোগও ছিল না তার। সঙ্গত কারণেই চার বছর ধরে চালিয়ে আসা বিক্রমের মানসিক নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ করেছে সে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ঘটনার দিন বিক্রম স্কুলে এসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ছুরিকাঘাত করে ওই ঘাতক। এরপর চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে ঘাতককে ধরে ফেলে। কিন্তু কবিতাকে বাঁচানো যায়নি। বিক্রম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নানা অপকর্মের সাথে জড়িত সে। দুই মাস আগে ডাকাতি করতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রসহ গ্রামবাসীর হাতে আটক হয় বিক্রম। পারিবারিক হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় রক্ষা পায়। কিন্তু এ ধরনের কালসাপরা যে সমাজের জন্য কতোটা ভয়ঙ্কর সেটা তো বোঝা গেল কবিতাকে খুন করার মধ্য দিয়েই। সে গত চার বছর ধরেই কবিতাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে বিচার সালিশও হয়। বিক্রমের পরিবারের উচিত ছিল তাকে নিবৃত্ত করা। কিন্তু সেটা করা হয়নি বলেই ঘটনা এতদূর পর্যন্ত গড়ালো। কবিতা নিজে এবং তার পরিবার প্রতিবাদ করেছে, প্রতিরোধ করেছে কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আর কতো কবিতার জীবনের ছন্দ থেমে যাবে? কী তাদের অপরাধ?আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। একটা সময় ইভটিজিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মিজানের মত শিক্ষকরাও প্রাণ দিয়েছে তারই ছাত্রের হাতে। এই সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে বিক্রমদের সংখ্যা যে আরও বাড়তে থাকবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন ছাত্র বা ছাত্রীর যখন পড়াশোনার করার কথা, জীবন গড়ার জন্য যুদ্ধ করার কথা তখন এদের কেউ কেউ জড়িয়ে যাচ্ছে অপকর্মে। গলদটা কোথায়? এই বয়সে প্রেমের ভূত তাদের মাথায় চাপে কী করে! কোথায় নীতি নৈতিকতা, কোথায় পারিবারিক অনুশাসন। সবকিছু কি রসাতলে গেল? কবিতার জীবন গেছে। বিক্রমের বয়স বেশি নয়। তাকে হয় জেলের ঘানি টানতে হবে, নয়তো ঝুলতে হবে ফাঁসির দড়িতে । জীবনের এই অপচয় রোধ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে সমাজতত্ত্ববিদদের। জীবন অনেক বড়, প্রতিটি জীবনেরই রয়েছে অপার সম্ভাবনা-এই বোধ জাগিয়ে তোলা আজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এ ধরনের অপতৎপরতা রোধ করা যাবে না। প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা, সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। কবিতাদের জীবনের ছন্দ ফিরিয়ে আনতে হলে মনোযোগ দিতে হবে এইদিকে। আর কোনো কবিতাকে যেন এভাবে অকালে ঝরে পড়তে না হয় সে জন্য যার যা করণীয় আছে সেটি করতে হবে। এইচআর/এমএস
Advertisement