আন্তর্জাতিক

হাত ঘড়িতে ৩ দিন বেঁচে থাকতে পারে করোনা

প্লাস্টিক এবং কিছু স্টেইনলেস স্টীলে তিনদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। সাম্প্রতিক সময়ে এক নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সে কারণেই এ ধরনের নিত্য ব্যবহৃত জিনিসের বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

সংক্রামক রোগ বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি লোকজনকে ব্যবহৃত হাতঘড়ি ও স্মার্ট ওয়াচ পরিষ্কারের ব্যপারে সচেতন থাকতে বলেছেন। করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে এসব জিনিস প্রতিদিনই পরিষ্কার রাখতে হবে।

ফিমেইল ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিগেল ম্যাকমিলান এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে সে বিষয়ে কথা বলেছেন। তার মতে, প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় এমন সব ডিভাইসও সব সময় পরিষ্কার করতে হবে।

কারণ এসব জিনিসের মধ্যেও করোনাভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রতিটি অণুজীব আপনার হাত ঘড়িতে বেঁচে থাকতে পারে। হোক সেটা স্মার্ট বা সাধারণ হাত ঘড়ি। তিনি বলেন, যে কোনো কিছুর পৃষ্ঠেই কোভিড-১৯ বেঁচে থাকতে পারে এবং সেখান থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।

Advertisement

তিনি বলেন, অনেকেই ব্যায়ামের সময় স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করেন। এটা বর্তমানে মানুষকে অনেক ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘড়িগুলো করোনার আবাসস্থলে পরিণত হতে পারে।

তিনি বলেন, লোকজন বার বার তাদের হাত পরিষ্কারের কথা মনে রাখেন তবে তারা সেভাবে তাদের স্মার্টওয়াচের বিষয়ে সচেতন থাকেন না। সারাদিনে বেশ কয়েকবার ঘড়ি স্পর্শ করা হয়। যদি কোনভাবে ঘড়ির মধ্যে করোনা আশ্রয় নিতে পারে তাহলে পরিষ্কার না করা পর্যন্ত সেটা ওখানেই দিনের পর দিন বেঁচে থাকবে।

অর্থাৎ কেউ যদি অপরিষ্কার ডিভাইস হাত দিয়ে স্পর্শ করে এর মাধ্যমে তার শরীরে সংক্রামণ ঘটতে পারে। সে কারণে ঘড়ি, স্মার্ট ওয়াচ অথবা ফিটনেস ট্র্যাকার প্রতিদিনই অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

এর আগে এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ব্যবহৃত জুতায় পাঁচদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। ফলে কারও জুতায় যদি করোনাভাইরাস থেকে থাকে তবে সেই জুতা পরে সুপারমার্কেট, বিমানবন্দর বা গণপরিবহনে উঠলে করোনার প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

Advertisement

জুতার সোল মূলত ব্যাক্টেরিয়া, ফাংগি এবং ভাইরাসের প্রজনন ক্ষেত্র। তবে ভাইরাস জুতার উপরে, নিচে বা যে কোন স্থানেই বেঁচে থাকতে পারে।

জুতার সোল টেকসই, সিনথেটিক বস্তু যেমন রাবার, পিভিসি বা লেদার লাইনের সাথে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়। এসব উপাদান উচ্চ মাত্রায় ব্যাক্টেরিয়া বহন করতে পারে। এগুলোতে বাতাস, তরল প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া সহজেই সেখানে দিনের পর দিন টিকে থাকতে পারে।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্ডবোর্ডে ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। অপরদিকে স্টেইনলেস স্টিল এবং প্লাস্টিকে এই ভাইরাস তিনদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সিনথেটিক আবরণে পাঁচদিন বা তার বেশি সময় করোনাভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে। এ কারণে জুতা ঘরের বাইরেই রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, বাজার থেকে শাক-সবজি এবং ফলমূল নিয়ে আসার পর যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সামান্য গরম পানি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

মেলবোর্নের পরিবেশ বিষয়ক বিজ্ঞানী নিকোল বিজলসমা সতর্ক করে বলেছেন, ঘরের দরজার বাইরে বা ভেতরে রাখার চেয়ে জুতা একেবারে বাড়ির বাইরে রেখে আসাই সবচেয়ে ভালো।

এ বিষয়ে সচেতন না হলে নিজের অজান্তেই করোনাভাইরাস সাথে নিয়ে ঘুরতে হবে। আর এতে করে ওই জুতা পড়ে যত জায়গায় যাওয়া হবে ভাইরাস তত জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। তাই জুতা, হাত ঘড়িসহ যে কোনো ব্যবহৃত জিনিস এবং বাজার থেকে আনা শাক-সবজি সাথে সাথে পরিষ্কার করতে হবে।

টিটিএন/এমএস