দেশজুড়ে

কক্সবাজারে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদেশি পর্যটকদের পদচারণা

কক্সবাজারে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বিদেশি পর্যটকদের পদচারণা। জেলা জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করায় পর্যটকরা নির্বিঘ্নে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বিচরণ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় সন্তুষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশের দু’স্থানে পৃথকভাবে দু’বিদেশি নাগরিক হত্যার শিকার হওয়ায় নিজ নিজ দেশের অধিবাসীদের সাবধানে চলাফেরা করতে নির্দেশনা জারি করে স্ব স্ব দেশের দূতাবাস। এ ঘোষণার পর কক্সবাজারে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকরা তাদের ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে ফিরে যান। অনেকে আবার আগাম বুকিং বাতিল করেন। এটি গণমাধ্যমে প্রচারের পর সরকারও কঠোর অবস্থানে দাঁড়ায়। দেশের পর্যটন এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নিদের্শনা দেয়া হয়। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উদ্যোগী হয়ে যে সকল স্থানে বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা নেন। হোটেল মোটেল এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব হোটেলে সিসি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামূলক করেন। তদারক করা হচ্ছে বিমান বন্দর ও সড়ক পথে ক’জন পর্যটক কক্সবাজারে প্রবেশ করছে। খোঁজ নেয়া হচ্ছে কে কোথায় অবস্থান করছেন সব কিছুই। এ কারণে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদেশিসহ সব ধরনের পর্যটকদের আগমন। এমনটি মনে করছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর।হোটেল সী-গালের প্রধান নির্বাহী ইমরুল সিদ্দিকী রুমি জাগো নিউজকে জানান, তাদের হোটেলে ৬ জন বিদেশি নিয়মিত অবস্থান করছেন। এ সপ্তাহে আরো ৪ জন বিদেশি উঠেছেন। এদের মধ্যে ইংল্যান্ড, ঘানা ও উজবেকিস্তানের পর্যটক রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কক্সবাজারে আরো বেশি বিদেশু পর্যটক আসবেন। নিরাপত্তার কোনো ধরনের কমতি নেই উল্লে­খ করে তিনি বলেন, বিদেশিরা এখানে নির্বেঘ্নে ঘোরাফেরা করছেন।তার দাবির পক্ষে একমত পোষণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। গত মঙ্গলবার কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন, কক্সবাজারে এবারের মতো বিদেশি পর্যটক কখনো চোখে পড়েনি। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে বিদেশিরা আসবে এটাই স্বাভাবিক। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারায় বিদেশি পর্যটকরা নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে বলে মনে করেন তিনি। বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে হোটেল লং বীচের হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ তারেক বলেন, বিদেশি পর্যটকদের মাঝে কোনো আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পর্যটন এলাকা হিসেবে এখানে সার্বক্ষণিক জেলা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ নজরদারি রাখছে।  প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোটেলে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিক এবং পর্যটকদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে উল্লে­খ করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত লং বীচে ২৫ জনের অধিক বিদেশি পর্যটক অবস্থান করছেন। এর মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া ও ইতালির পর্যটক রয়েছে। এছাড়াও তাদের ভেন্যুতে অনুষ্ঠিতব্য একটি প্রোগ্রামে হাজারের অধিক পর্যটক অংশ নিবে এবং সেখানেও অনেক বিদেশি পর্যটক আসবেন বলে উল্লে­খ করেন তিনি। হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইসের রুম ডিভিশন ম্যানেজার (আরডিএম) মজিদুল আলম মাজেদ জাগো নিউজকে বলেন, সাগর আর সবুজ পাহাড়ের মিতালী দেখতে এখানে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আসছেন, যাচ্ছেন। প্রশাসনের সার্বক্ষণিক সহায়তায় বিদেশি পর্যটকদের কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয় না। মঙ্গলবারও তাদের হোটেলে বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যটক অবস্থান করছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর সবচেয়ে বেশি বিদেশি নাগরিক অবস্থান করে পর্যটন শহর কক্সবাজারে। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ১০টিরও বেশি কার্যালয়। চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটাল, কক্সবাজার সৈকতে সার্ফিং ও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এই দাতা সংস্থাগুলোতে শতাধিক বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। দেশে দু’জন বিদেশি হত্যার পর এসব স্থানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। কক্সবাজারস্থ আইওএম এর মুখপাত্র আসিফ মুনীর জাগো নিউজকে বলেন, কক্সবাজারে আইওএমসহ বিভিন্ন ধরনের ইউএন এজেন্সি কাজ করছে। এ সকল সংস্থার হয়ে এখানে দায়িত্ব পালন করেন বিদেশি অনেক নাগরিক। এ সকল সংস্থার কার্যক্রম এবং বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। আগতদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক। তাই বিদেশিরা এখানে নিরাপদেই আসা-যাওয়া করছেন বলে মনে করেন তিনি।পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে কক্সবাজারকে। শুধু বিদেশি নয় সব ধরনের পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। হাসিমুখে বেড়াতে এসে পর্যটকরা হাসিমুখেই ফিরে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জাগো নিউজকে জানান, পর্যটন নগরী কক্সবাজার অত্যন্ত উপভোগ্য স্থান। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিনই আসা-যাওয়া করছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় কাজ করছে প্রশাসন। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব বিভাগের কর্মকর্তারা আন্তরিক বলে উল্লে­খ করেন তিনি। সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমএস

Advertisement