বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২টা। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের সামনে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি থেকে বাজারের ক্রেতাদের উদ্দেশ্য করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দ্রুত বাজার শেষ করে ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। এ সময় কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, মাছ ও মাংসের দোকানে ক্রেতাদের গায়ে গা ঘেঁষে বাজার করতে দেখা যায়।
Advertisement
দুপুর সোয়া ১২টা, কারওয়ান বাজারের সামনে রিকশা, প্রাইভেটকার, ভ্যান ও মোটরসাইকেলের জট। রাস্তায় ভাসমান ভ্যানওয়ালা উচ্চস্বরে এই মিষ্টি তরমুজ বড়টা ২৫ আর ছোটটা ২০ টাকা বলে ডেকে চলেছেন। রাস্তার পাশে মাটিতে বিছিয়ে তরমুজ বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। প্রচণ্ড রোদে টপটপ করে ঘাম ঝরে পড়ছে তরমুজের ওপর। বেশ কয়েকজন ক্রেতা দরদামে ব্যস্ত। কয়েকজন শ্রমজীবীকে টুকরি মাথায় এদিকে-সেদিক যেতে দেখা যায়। এখানেও পুলিশের একটি টহল গাড়িকে বারবার চক্কর দিতে দেখা যায়।
এ দুটি দৃশ্যপট রাজধানীর দুটি বাজারের। করোনাভাইরাস সংক্রমণে সরকার বাসায় অবস্থানের ব্যাপারে বারবার সতর্ক করলেও বাজার করার নামে নগরবাসী প্রতিদিনই বাইরে ভিড় করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে গোলদাগ কেটে রাখলেও অধিকাংশ মানুষকেই সে দূরত্ব না মেনেই একে অন্যের ওপর শ্বাস ফেলে বাজার করতে দেখা যায়। বাজার করার উছিলায় পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্কতাও তারা যেন বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (বৃহস্পতিবার) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ১ হাজার ৯৭টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন ১২২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬২ জন ঢাকার। এর পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তকৃত ৫৪ জন রোগীর ৩৯ জনই ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
Advertisement
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত হয়। গত ১ মাস ১ দিনে সারাদেশে সর্বমোট ৩৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। তা মধ্যে ১৮৬ জনই ঢাকার বাসিন্দা। সে হিসাবে রাজধানী ঢাকা এমনিতেই হটস্পট। ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে মৃত ২১ জনের মধ্যেও ঢাকার বাসিন্দাই বেশি বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বারবার জনসমাগম এড়িয়ে চলতে নিষেধ করলেও নগরবাসী তা মানছেন না। এক্ষেত্রে ছোটবড় বাজারগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসে একজন ব্যক্তি তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে করোনায় আক্রান্ত হয়েও সে অসুস্থ নাও হতে পারে। কিন্তু তার সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আরেকজন কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন সহজেই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে।
এ কারণে বাজারগুলোতে জনসমাগম কমাতে না পারলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।
Advertisement
এমইউ/বিএ