শবে বরাত মানেই পুরান ঢাকার এক নতুন সাজ। বিভিন্ন নামিদামি কনফেকশনারি, হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি যেমন আলোকসজ্জায় সাজে, তেমনি বসে বিভিন্ন আকৃতির রুটি (বরাতি রুটি), হালুয়া ও মিষ্টি, পরোটা, আস্ত মুরগি ও কাবাবের পসরাও।
Advertisement
কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে পুরান ঢাকার এ ঐতিহ্য। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দিনগত রাতে শবে বরাত পালন করা হলেও কোথাও বসেনি মুখরোচক এমন খাবার-দাবারের কোনো পসরা। বিক্রি হয়নি পেঁপে, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ময়দা, সুজি ও গাজরসহ বিভিন্ন পদের হালুয়া। শোনা যায়নি ক্রেতা আকর্ষণে বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক। এমনকি বরাতের রাতকে আলোকজ্জ্বল করতে অন্যসময় পুরান ঢাকায় হরেক রঙের বাতির ঝিলিক থাকলেও বৃহস্পতিবার ছিল না তা-ও। সারাদেশের মতোই পুরান ঢাকা যেন থমকে গেছে করোনাভাইরাসে।
এ এলাকার চকবাজার, রায় সাহেব বাজার, বেচারাম দেউড়ি, নাজিরা বাজার, কলতাবাজার, বেগমগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ঐতিহ্যবাহী এসব খাবারের পসরা বসেনি। বিভিন্ন এলাকার মধ্যে চকবাজারে মূলত জমজমাট খাবার সামগ্রী আসর বসে আসছিল। কিন্তু বিকেলে চকবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে সব দোকান-পাট বন্ধ। করোনার সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে ঘরে রাখার জন্য প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে একসময়ের সরগরম পুরান ঢাকা যেন চুপসে গেছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবারের শবে বরাতে চালের রুটি, মাংস ও হালুয়াসহ নানা পদ তৈরি করে বড় বড় ট্রেতে পাড়া-পড়শী এবং স্বজনদের বাসায় পাঠানোর রেওয়াজ থাকলেও এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সেটা কো যায়নি। আগে শবে বরাতের বয়ান ও দোয়া শেষে বেশিরভাগ মসজিদে শিরনি বা হালুয়া-রুটি বিতরণ করা হলেও এবার মসজিদেই যেতে পারছেন না মুসল্লিরা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে ঘরে নামাজ পড়তে হচ্ছে তাদের।
Advertisement
আগে শবে বরাতের দিন ও রাতে পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে অনেকেই আজিমপুর কবরস্থানে ছুটে আসতেন। শত শত ভিক্ষুক দীর্ঘ লাইন ধরে কবরস্থানের ভেতরে বাইরে বসে থাকতেন। কিন্তু এবার আজিমপুর কবরস্থানের দৃশ্য ব্যতিক্রম। এ কবরস্থানে জিয়ারত আগে থেকেই বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। দুপুরের পর থেকেই পুলিশ আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের লোকজনের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়।
পুরান ঢাকাবাসী আশা করছেন, করোনার এই দুর্দিন কেটে যাবে। পুরান ঢাকা আগের মতোই তার ঐতিহ্য-রেওয়াজ লালন করতে শুরু করবে।
এমইউ/এইচএ/পিআর
Advertisement