করোনাভাইরাস মহামারির যখন চীনে ভয়াবহ আকার ধারণ করে; তখন দেশটিতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উপহার হিসাবে দিয়েছিল ইতালি। বর্তমানে করোনার ভয়ঙ্কর থাবার মুখে পড়া ইতালির পিপিইর ভীষণ প্রয়োজন; এমন পরিস্থিতিতে ইতালিরই দেয়া সেই উপহারের পিপিই ইতালির কাছেই বিক্রি করতে চায় চীন।
Advertisement
চীনের উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালিতে প্রাণকেন্দ্র তৈরি করেছে। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইতালির জনগণ। বিশেষ করে দেশটির সম্মুখ সমর যোদ্ধা চিকিৎসক এবং নার্সরা বিপদের মধ্যে রয়েছেন।
মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ইতালিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ১৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। বিপজ্জনক এই ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখের বেশি মানুষ। এই সঙ্কটের পর বিশ্বের কাছে মানবিক ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে চীন। দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা চিকিৎসা সরঞ্জাম, পিপিই ও অন্যান্য সামগ্রী উপহার হিসাবে দিচ্ছে।
এর অংশ হিসাবে ইতালিতেও বেশ কিছু সুরক্ষা সামগ্রী পাঠিয়ে দেয় চীন। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, ইতালিতে পাঠানো সুরক্ষা সামগ্রী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পাঠানো হয়নি, বরং এর পেছনে আছে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য। বেশ কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এসব পিপিই আসলে ইতালির কাছে বিক্রি করেছে বেইজিং। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য স্পেকটেটর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, করোনাভাইরাসের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের সময় চীনকে উপহার হিসাবে দেয়া পিপিই ইতালিকেই কিনে ফেরত নিতে বাধ্য করেছে বেইজিং।
Advertisement
ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপে এই ভাইরাস আঘাত হানার আগে, দেশের জনগণকে রক্ষার কাজে সহায়তা করতে চীনে কয়েক টন পিপিই পাঠিয়ে দেয় ইতালি। পরে ইতালিতে কিছু পিপিই ফেরত পাঠিয়ে দেয় চীন এবং এ জন্য ইতালির কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন করোনা পরীক্ষা কিট ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করছে। তবে চীনের কাছ থেকে এসব কিট এবং সুরক্ষা সামগ্রী ভেজাল বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ।
ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় স্পেন চীনের কাছ থেকে কেনা ৫০ হাজার র্য্যাপিড টেস্টিং কিট ফেরত পাঠিয়েছে। এমনকি নেদারল্যান্ডসও চীনের কাছে থেকে কেনা মাস্ক যথাযথ মানসম্মত নয় বলে অভিযোগ তুলেছে। এছাড়া পাকিস্তানও চীনের কাছে থেকে এন-৯৫ মাস্ক অর্ডার করলেও অন্তর্বাসের তৈরি মাস্ক দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটি।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় দেশটির বিজ্ঞানীরা। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৭৩ জন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৮ হাজার ৫০৫ জন। তবে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৮৬ জন।
Advertisement
সূত্র: এএনআই।
এসআইএস/পিআর