ড. শামীম আহমেদ
Advertisement
এই রিপোর্টটি যখন লিখছি, তখন ৮ এপ্রিল, ২০২০ তারিখের রাত ১০টা প্রায়। কতক্ষণ লিখবো সেটা বলতে পারছি না। এ পর্যন্ত হিসাব মতে, বাংলাদেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২১৮ জন, মৃতের সংখ্যা ২০ জন। শুধু ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২২ জন। গত ১৭ নভেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ৫৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধের শরীরে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। পরে ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই ভাইরাস সম্পর্কে অফিসিয়ালি অবহিত করে চীন। এর ধারাবাহিকতায় ৭ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে শনাক্ত করার কথা জানায়। চীনের হুবেই প্রদেশেই প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে গত ১১ জানুয়ারি। ৩১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগটি ঘিরে বৈশ্বিক পরিসরে ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ জারি করে। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাস রোধে কৌশলগত প্রস্তুতি ও মোকাবেলার পরিকল্পনা প্রকাশ করে। ১১ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসজনিত রোগটির নাম দেয়া কোভিড-১৯। এই হলো কোভিড-১৯ রোগের সংক্ষিপ্ত ব্যাকগ্রাউন্ড ইতিহাস (সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।
এই ইতিহাস বলার পেছনের কারণ, যদি এটাকে শুধু চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের কথা হিসেবে বিবেচনা করি, তবে সেই ১৭ নভেম্বর যে করোনার উৎপত্তি উহান শহর, সেটা থেকে সাময়িক মুক্ত হলো আজ ৮ এপ্রিল। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার মাস। তাও যদি বিবেচনা করেন তাদের প্রস্তুতি, চিত্রটা কেমন ভিন্ন লাগবে। উহানের রোগীদের চিকিৎসা দেয়া ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় বীরের মর্যাদা।
এবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আসা যাক। বাংলাদেশে প্রথম ৮ মার্চ তিনজনের মাঝে এই কোভিড-১৯ রোগ ধরা পড়ে বলে জানা যায়। পরে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার দুইজনের মাঝে ধরা পড়ে ১৫ মার্চ। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। তারপর শুরু হয় সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল। চমকে দেয়ার মতো পরিসংখ্যান দেখা যায় গত ক’দিনে। ৩ এপ্রিল ৫ জন, ৪ এপ্রিল ৯ জন, ৫ এপ্রিল ১৮ জন, ৬ এপ্রিল ৩৫ জন, ৭ এপ্রিল ৪১ জন আর ৮ এপ্রিল আক্রান্ত হিসেবে ৫৪ জন আক্রান্ত বলে জানানো হয়। একই সাথে ৪ এপ্রিল ২ জন, ৬ এপ্রিল ৩ জন, ৭ এপ্রিল ৫ জন আর ৮ এপ্রিল ৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। পরিসংখ্যানের সমাপ্তি এখানে টানছি, কারণ এসব তথ্য বহুলপ্রকাশিত এবং নিত্য পরিবর্তনযোগ্য। লেখার মূল উদ্দেশ্যটিও কিন্তু পরিসংখ্যান ঘিরে নয়।
Advertisement
বিষয়বস্তু তো শিরোনাম অনুযায়ী হওয়া উচিত, এই রোগের সাথে ক্ষুধার তাড়নার কী সম্পর্ক? ক্ষুধা বিষয়টি মূলত কৃষিপণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানির উপর নির্ভরশীল। আবার সেই কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও আমদানি, পণ্যের পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় আজ চরমভাবে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস এবং এর দ্বারা সংগঠিত কোভিড-১৯ রোগকে কেন্দ্র করে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের পুরো সিস্টেমকে। পুরো সিস্টেম নিয়ে বলার মতো দুঃসাহস না থাকলেও কৃষিবিদ হিসেবে কৃষি সেক্টর নিয়ে যতসামান্য কিছু বলা যায়।
বাংলাদেশে ফসল উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি হচ্ছে রবি মৌসুম। মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। বোরো ফসলের মাঠে এসময় কৃষকদের ব্যস্ত সময় কাটে ফসলের নিবিড় পরিচর্যায়, সেচ কার্যক্রম, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, এমন কার্যক্রমে। কিন্তু গত ২৫ মার্চের পর থেকে শুরু হওয়া সরকারি ছুটি ঘোষণা আর দেশজুড়ে করোনার থাবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলার গোটা কৃষি ও এর সাথে জড়িত পেশাজীবী গোষ্ঠী। বোরোর পাশাপাশি মাঠে রয়েছে পাকা গম, মাঝ বয়সী আম আর লিচু্। প্রকৃতভাবে বিবেচনা করলে এখন এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চলছে ’লক-ডাউন’ নামের করাল গ্রাস। ধীরে ধীরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে প্রায় গোটা দেশজুড়ে। সরকারের নির্দেশনা মেনে প্রতিটি উপজেলাতে যদিও কৃষি অফিসগুলো চালু আছে, কিন্তু এমন একটি সংক্রামক ব্যাধির সাথে লড়াই করে ফসল ফলাতে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে বাংলার মেহনতি কৃষকদের। কৃষকরা তাদের প্রধান অর্থকরী ফসল বোরো ধানের কিংবা আম-লিচু বাগানের সঠিক পরিচর্যা করতে পারছে না। যদিও সরকার করোনা মোকাবেলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই প্যাকেজ থেকে কি কৃষক সরাসরি উপকৃত হওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে?
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে যা রয়েছে: সম্ভাব্য পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার যে চারটি কৌশল অবলম্বন করবে তা হলো- ক) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি; খ) আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন; গ) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি; ও ঘ) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি। এই চারটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে- ১) ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেয়া; ২) ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেয়া; ৩) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো; ৪) প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম প্রণয়ন করা। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)।
এই প্রণোদনা প্যাকেজ নিঃসন্দেহে করোনা সৃষ্ট দেশের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সাথে হয়তো কৃষকের এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু কৃষকের বর্তমান সমস্যা সমাধানে প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা কি রাখতে পারবে? এই প্রণোদনা কি পারবে কৃষকের ফসল নিরাপদে ঘরে তুলতে? এই মহাদুঃশ্চিন্তা কমানোর জন্য কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরিপ-১/২০২০-২১ আউশ (২য় পর্যায়) উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণের জন্য ৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৫০ টাকা কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির অর্থ ছাড়করণ ও অগ্রিম উত্তোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় জমির পরিমাণ থাকবে ১০৯২৬৫ বিঘা আর উপকারভোগী চাষির সংখ্যা হবে ১০৯২৬৫ জন। বীজ উপকরণের পরিমাণ ৫৪৬ দশমিক ৩২৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ও এমওপি উপকরণের পরিমাণ যথাক্রমে ২১৮৫ দশমিক ৩ ও ১০৯২ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন। বীজ, ডিএপি ও এমওপি সারে জনপ্রতি উপকরণ বা আর্থিক সহায়তার পরিমাণ যথাক্রমে ৫, ২০ ও ১০ কেজি হিসেবে ৩০০ টাকা, ২৮০ টাকা ও ১৩০ টাকা। এছাড়া পরিবহন ব্যয় ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদও অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবারের এই প্রণোদনায়।
Advertisement
এটা হয়তো আগাম সহায়তা হিসেবে কৃষকদের আউশ আবাদে প্রত্যক্ষ সহায়তা করবে, হয়তো পরোক্ষভাবে রবি মৌসুমে কিছুটা আপদকালীন সহায়তা কৃষক এ থেকে পাবেন। কিন্তু এই সহায়তাই কি যথেষ্ট? গেল বছর কৃষকের ফসল কাটার শ্রমিক সংকট মেটাতে অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে। বহু এলাকায় শ্রমিক না পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা তার অফিসের সমস্ত জনবল নিয়োজিত করেছিলেন কৃষকের সোনালী ফসল ঘরে তোলার জন্য। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো জায়গায় প্রশাসনের লোক, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী কিংবা সমাজ সেবকদের পর্যন্ত মাঠে নামতে হয়েছে কৃষকের ফসল কর্তনের জন্য। রীতিমত হিমশিম খেয়েও অনেক স্থানে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য। তাহলে বর্তমান করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে কি সক্ষম হবো আমরা? যদিও গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক মহোদয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০০০ (চার হাজার) কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এক বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই প্রকল্প প্রণয়নের কাজও বর্তমানে চলমান। সুতরাং সেখান থেকেও চলতি রবি মৌসুমে উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এই যখন পরিস্থিতি তখন কিভাবে কৃষক ঘরে বসে থাকেন? আর কৃষক-কৃষিবিদের সম্পর্কতো রাধা-কৃষ্ণের। কৃষ্ণের বাঁশির সুরে রাধা যেমন ছুটে আসে, কৃষকের মাঠে বিচরণ তেমনি ব্যাকুল করে তোলে কৃষি কর্মকর্তা, সার-বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সর্বস্তরের কর্মীদের। কারণ এই কৃষকইতো আমাদের নায়ক। তাকে তো বাঁচাতেই হবে। তাহলে সত্যিকারের প্রণোদনা এই মুহূর্তে কার বেশি প্রয়োজন? যারা নিজেদের স্বার্থে দেশের হতদরিদ্র গার্মেন্টস কর্মীদের গত ২৫ মার্চ ঝুঁকির মুখে গাঁদাগাঁদি করে শহর থেকে গা ধাক্কা দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়, আবার সরকারি নির্দেশনার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে বিপুল লাভের লোভে কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে আবার বেতন-ভাতা আর চাকরির ভয় দেখিয়ে যোজন যোজন মাইল পায়ে হাঁটিয়ে করোনা রোগীর মৃত্যুপুরী ঢাকায় নিয়ে এলো তাদের? নাকি যারা নিজের জীবনকে বাজি রেখে ১৭ কোটি মানুষের মুখে আহার জুটিয়ে দেয় তাদের? যদি আবার একটু ফিরে যাই সেদিনের সেই প্রণোদনা প্যাকেজের আলোচনায়, সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, দেশে করোনায় সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধিতে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম প্রধান কাজ হলো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো: (১) বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ; (২) ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়; (৩) লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ; (৪) ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং (৫) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা স্বভাবতই ভাববেন, বর্তমান রবি মৌসুমে মাঠে পড়ে থাকা বোরো, গম কিংবা আম-লিচুসহ অন্যান্য ফসলের সঠিক পরিচর্যা ও কৃষকের ফসল নিরাপদে ঘরে তোলার জন্য আপদকালীন একটি কৃষি প্রণোদনার বিশেষ প্রয়োজন নয় কি? কৃষি বিষয়ক সকল সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কৃষি বিষয়ক টিভি-রেডিও চ্যানেলগুলোর কি এগুলো নিয়ে একটু ভাবা দরকার নয়? আমাদের মাঠের নায়ক কৃষকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, তাদের যারা সেবা দিচ্ছেন, সেই কৃষি কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? করোনা কি তাদের আক্রমণ করবে না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্বাস্থ্য বীমার আওতায় কি কৃষক-কৃষিবিদরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার বরাবরই কৃষিবান্ধব। আমরা আশা ও বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই উল্লেখিত বিষয়গুলো ইতোমধ্যেই তার সদয় বিবেচনায় নিয়েছেন। আমরা আশা করি অচিরেই তার নিকট থেকে এই বিষয়ে একটি ঘোষণা শুনতে পারব। দেশের কৃষককে বাঁচাতে তিনি তার পিতা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষিকেই অগ্রাধিকারভিত্তিতে মূল্যায়ন করবেন, এটাই আমরা বিশ্বাস করি। সেক্ষেত্রে শিরোনামে যেটা বলা হয়েছিল, ক্ষুধার তাড়না আর সমসাময়িক করোনা- দু’টোই সমসাময়িক দুঃশ্চিন্তার কারণ। আপাতদৃষ্টিতে করোনার প্রভাবে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র যেভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতিটাকে প্রাধান্য দিচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য চিত্রটা কিন্তু ভিন্ন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃষির ভূমিকাকে যদি এভাবে দেখি যে, বিগত বেশ কিছু বছর ধরে কৃষি কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে আলাদা করে কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি, বরং জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার নিয়মিতভাবে উর্ধ্বে রেখেছে। আর সেই বাড়তি চাপ থেকে সরকার মুক্ত থাকাতেই কিন্তু নিতে পারছে একটার পর একটা মেগা প্রজেক্ট। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেখানে দিনে দিনে আমদানি নির্ভর কৃষির দিকে ঝুঁকছে, বাংলাদেশ সেখানে রফতানিমুখী কৃষির এক গৌরবময় উদাহরণ।
এসব নিয়ে কথা বলায় কিংবা আল্লাহর ওপর ভরসা করার কথা বলায়, আমাকে আমার কিছু বিলাতপ্রবাসী বন্ধু বলে- আমি নাকি ভীতু প্যাসিমিস্টিক (নৈরাশ্যবাদী) লোক। কারণ আমি বাংলাদেশের এই অসহায় গরিব মানুষগুলোর মতো মাঝে মাঝে ভাবি, সামনে রোজার মাসে বেশি বেশি ইবাদত করলে হয়তো করোনা চলে যাবে, অথবা আর একটু গরম পড়লে সাথে একটু বৃষ্টি হলেই হয়তো করোনারভাইরাস টিকে থাকতে পারবে না। কারণ অন্য সবার মতো করোনায় মরার ভয়ের চেয়ে না খেয়ে মরার ভয় যে এখানে অনেক বেশি। উন্নত দেশে থেকে আশাব্যঞ্জক চিন্তা করার সুযোগ আমার হয়তো নেই, তাই আমার চিন্তা চেতনাটা নেতিবাচকই সব সময়। আপনি মশাই ইতিবাচক চিন্তাটাই করুন না। তবে মনে রাখবেন, আমি বা আমরা কিন্তু ভালোই ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশেই যাচ্ছিল। এই আপনাদের ঢুকতে দিতে গিয়েই আজ আমাদের এই দশা। অথচ আপনাদের একটু কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলায় বললেন...। থাক সে কথা। সম্ভব হলে আপনাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে এই করোনা মোকাবেলার উপায় খুঁজতে সহায়তা করুন। দেশীয় বিজ্ঞানীরা কিছু উদ্ভাবন করলে সেগুলোর সমালোচনা না করে, সেগুলোর ভুল দিকটা ধরিয়ে সেটিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিন। ড. বিজন স্যার কিংবা ড. আলিমুল স্যারের উদ্ভাবনকে তুচ্ছ না ভেবে এর চেয়ে ভালো কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টাটাই হবে সঠিক সমালোচনা, আসল ইতিবাচক চিন্তা। বাংলাদেশের জন্য বর্তমানে ক্ষুধার তাড়না আর করোনা দু’টোই মূল আলোচনা। আর এই নিয়ে ভাবাটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক ভাবনা। একটি পিওর অপটিমিস্টিক চিন্তা।
লেখকঅতিরিক্ত উপ-পরিচালক(কন্দাল, সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল)হর্টিকালচার উইংকৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)
এইচএ/এমকেএইচ