দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় করোনার বিস্তার রোধে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধের আওতায় রয়েছে আদালতও। এ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা বলা মুশকিল।করোনা যাওয়ার পর অবস্থা স্বাভাবিক হলেও অর্থনৈতিক বড় ধাক্কা আসবে।
Advertisement
এ অবস্থায় আইনজীবীদের মাঝে এক রকম হতাশা কাজ করছে। কারণ অনেক আইনজীবী আছেন তারা মাসে যা আয় করেন তা প্রতিমাসেই তাদের ফুরিয়ে যায়। অপরদিকে মর্যাদার ভয়ে কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতেও পারেন না। আইনজীবীরা তাকিয়ে আছেন আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং আইনজীবী সমিতির দিকে।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির লাইব্রেরি সম্পাদক আতাউর রহমান খান রুকু অসহায় আইনজীবীদের পাশে দাঁড়াতে প্রণোদনা তহবিল ও ঋণ প্রদানে ঢাকা বারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রুকু বলেন, করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন মতো বাংলাদেশও এই মহামারির কবলে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। সবার সঙ্গে আইনজীবীরাও নিজ নিজ অবস্থানে আবদ্ধ। কিছু কিছু সচ্ছল আইনজীবী ছাড়া অধিকাংশরা বিশেষ করে জুনিয়র আইনজীবীরা আজ কঠিন সংকটময় সময় অতিবাহিত করছেন। সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে।
Advertisement
তিনি বলেন, তাদের এই কঠিন সময়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আর্থিক প্রণোদনা এবং বেনিভোলেন্ট ফান্ড হতে ঋণ প্রদান করা জরুরি বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত খাতসমূহ থেকে করোনা প্রণোদনা ফান্ড গঠন করা যেতে পারে-
বার্ষিক অনুষ্ঠান: আপ্যায়ন, সাধারণ সভা, ইফতার, স্বাধীনতা দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, ঈদ পুনর্মিলনী, বিজয়া সম্মেলন, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা, সরস্বতী পূজা, জন্মাষ্টমী, বাৎসরিক নাট্যানুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণী ইত্যাদি বাবদ বাজেট ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রায়। এই বাজেট থেকে বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলো স্বল্প পরিসরে ছোট আকারে সম্পন্ন করে তার মধ্যে ২০ লাখ টাকা করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
আইনজীবী দুস্থ কল্যাণ তহবিল: আইনজীবী দুস্থ কল্যাণ তহবিল বাবদ বাজেট ৫৫ লাখ (বাজেট অনুসারে) টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
রিলিফ ফান্ড: রিলিফ ফান্ড বাবদ ৪০ লাখ (বাজেট অনুসারে) টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা করোণা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
Advertisement
ওকালতনামা চাঁদার টাকা মওকুফ: ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা বিক্রয়লব্ধ টাকা থেকে ২০% টাকা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে প্রদেয় বার্ষিক ৫০ লাখ (বাজেট থেকে অনুসারে) চাঁদার টাকা আবেদনের ভিত্তিতে মওকুফ করতে করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা বিক্রয়লব্ধ টাকা থেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বকেয়া চাঁদা ৯৬ লাখ (বাজেট অনুসারে) টাকা আবেদনের ভিত্তিতে মওকুফ করতে করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
লাইব্রেরি সম্পাদকের ফান্ড: লাইব্রেরি সম্পাদকের বাজেটের ফান্ড থেকে ১০ লাখ টাকা করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
ক্রিড়া সম্পাদকের ফান্ড: ক্রিড়া সম্পাদকের বাজেটের ফান্ড থেকে ১০ লাখ টাকা করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
বাজেট: করোনাভাইরাস সেবায় বাজেটে উল্লেখিত ৫ লাখ টাকা করোনা প্রণোদনা ফান্ডে প্রদান করা যেতে পারে।
আইনজীবীদের জমাকৃত বেনিভোলেন্ট ফান্ড: আইনজীবীদের জমাকৃত বেনিভোলেন্ট ফান্ড থেকে আবেদনের ভিত্তিতে লোন প্রদান।
অর্থাৎ, সর্বমোট ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা করোনা পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের প্রণোদনা ও লোন হিসাবে প্রদান করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, উল্লেখিত খাতগুলো থেকে বর্তমান কার্যকরী কমিটি সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে আলোচনা ক্রমে সমন্নয় কমিটি গঠন করে আইনজীবীদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রণোদনা প্রদান এবং আইনজীবীদের জমাকৃত বেনিভোলেন্ট ফান্ড থেকে আবেদনের ভিত্তিতে লোন প্রদানের জন্য ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মহোদয়গণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহোদয়গণ এবং বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে আইনজীবীদের এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
জেএ/এমএসএইচ/পিআর