বিশেষ প্রতিবেদন

নতুন সাজে নতুন রূপে নবাবগঞ্জ পার্ক

নবাবগঞ্জ পার্ক। ঢাকা শহররক্ষায় সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ ঘেঁষে পুরান ঢাকার লালবাগে ১৯৬৬ সালে নির্মিত হয়েছে এটি। একসময় নবাবগঞ্জ পার্ক এলাকায় যাওয়া যেতো না ট্যানারির বর্জ্যের দুর্গন্ধে। সেজন্য নামে পার্ক হলেও এটি দীর্ঘদিন প্রায় দর্শনার্থীশূন্যই পড়েছিল। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এ পার্ক সম্প্রতি পেয়েছে নতুন সাজ। ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্কটি আধুনিকায়নের ফলে এখন এটি এলাকার লোকজনের অবসর কাটানোর মনোরম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

Advertisement

নবাবগঞ্জ পার্ক ঘুরে দেখা যায়, এর মাঝপথে রয়েছে সারি সারি পাম গাছ। গাছের গোড়ার জায়গাটা নুড়িপাথর দিয়ে সাজানো। গাছগুলোর একপাশে জনসাধারণের বসার জন্য রয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে বানানো বেঞ্চ। মাঠের চারপাশে ৩০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ হাঁটার পথ। সেই হাঁটার পথ বা ওয়াকওয়ের নিচে আছে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৬ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। তাই মুষলধারে বৃষ্টি হলেও পানি জমে থাকবে না পার্কটিতে। আবার মাঠের নিচে তৈরি করা রিজার্ভারে জমে থাকা পানি পরিশোধনের পর ব্যবহার করা যাবে পুনরায়। পানি ছিটিয়ে ঘাস পরিচর্যার জন্য আছে স্প্রিংকলার সিস্টেম।

চারপাশে দুই ফুট উঁচু লোহার নেটের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন ফুল ও ফল গাছ। বকুল ফুল, বট গাছ, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। পাশে বেড়িবাঁধের ঢালুতে ব্লক ইটের গাঁথুনি পার্কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে আরও। এছাড়া রাতে এলইডি বাতির সুবাদে আলোকিত থাকে পুরো মাঠ। নিরাপত্তার জন্য আছে সিসি ক্যামেরাও।

শিশু-কিশোরদের আনন্দ-খেলাধুলার জন্য আলাদা কর্নারে আছে দোলনা, স্লিপার, ঢেঁকিকল, হোন্ডা, রাউন্ড হর্সসহ নানান রাইড। বড়দের জন্য ফুটবল খেলার জায়গা ছাড়াও রয়েছে টেনিস কোর্ট।

Advertisement

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ৫৪ দশমিক ৭৫ কাঠাজুড়ে বিস্তৃত এই পার্ক আধুনিকায়নের মাধ্যমে সাজাতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পার্কের ঠিক উত্তর পাশে গড়ে উঠছে একটি পাঁচতলা মাল্টিপারপাস ভবন। এতে খরচ হচ্ছে ৭ কোটি টাকা। ভবনটিতে থাকবে কমিশনার কার্যালয়, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, ব্যায়ামাগার ও কফি হাউজ।

পার্কটির বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মকলেছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অনেক আগে থেকে এখানে পার্কটি আছে। কিন্তু এটা ব্যবহারের কোনো পরিবেশ ছিল না। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এই পার্কটি খুব সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নতুন রূপ দিয়েছেন। স্থানীয় শিশু-কিশোররা এখানে খেলতে পারে, তাদের জন্য বিভিন্ন রাইড আছে এখানে। এছাড়া বড়দেরও খেলার, বসার, হাঁটাহাঁটি করার ব্যবস্থা আছে এখানে। এক কথায় দারুণ একটা পার্ক এলাকাবাসীকে উপহার দিয়েছেন সাঈদ খোকন।

পার্কটির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, হাজারীবাগ ও বেড়িবাঁধ এলাকায় বসবাসরতদের সন্তানদের জন্য এখানে চিত্তবিনোদনের তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। তাছাড়া নবাবগঞ্জ মাঠ অবহেলিত ও বেদখল ছিল। আমরা এটি উদ্ধার করে একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণ করেছি। এতে শিশুদের জন্য বিনা পয়সায় উন্নতমানের রাইডে খেলার ব্যবস্থা রাখা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই ঢাকাকে। এরই মধ্যে অনেক মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

Advertisement

জানা গেছে, ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি ৩০ শতাংশ বহন করে ডিএসসিসি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে গ্রহণ করা ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ৩১টি মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়ন করেন রফিক আযমের নেতৃত্বে ৭০ জন স্থপতি। মাঠগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য খুলেও দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি মাঠ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালেই (আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হচ্ছে।

প্রকল্পভুক্ত পার্ক ও মাঠগুলোর মধ্যে নবাবগঞ্জ পার্ক ছাড়াও রয়েছে মতিঝিলের সিরাজ উদ্দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, জোড় পুকুর মাঠ, রসুলবাগ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্ক।

প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে যা থাকছেডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে প্রায় একই রকম সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এর বাইরে কোনো কোনোটিতে কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, কার পার্কিং, জাদুঘর, পাঠাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনীও থাকছে। থাকছে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্যও। ফলে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা হয়ে উঠছে একেকটি মাঠ ও পার্ক।

এএস/এইচএ/এমএস