প্রবাস

কানেকটিকাটে করোনায় প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে ওয়াটারবুরি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কানেকটিকাটে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী তিনিই প্রথম বাংলাদেশি।

Advertisement

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার পরিবারের কাউকেই চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি জানাননি। এর আগে অসুস্থতার কারণে তিনি স্থানীয় একটি নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে তার ছেলে জানিয়েছেন। কানেকটিকাটের বিভিন্ন শহরে আরও ১৫ জন বাংলাদেশি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশির দেশের বাড়ি যশোর জেলার মনিরামপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওয়াটারবুরি শহরে তার বড় ছেলের সাথে বসবাস করতেন। বর্তমানে তার চার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বাকি ২ ছেলে ও চার মেয়ে বাংলাদেশ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে নিউ ব্রিটেন শহরে একই পরিবারে ৭ জন বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তাদের বাড়ি বরিশাল জেলায়। এছাড়াও ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে ৫ জন এবং অন্যান্য শহরে আরও ২ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কানেকটিকাটের বিভিন্ন শহরে পাঁচ সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় নিজ নিজ বাসস্থানে অবরুদ্ধ হয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। তারা করোনা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না।

Advertisement

কানেকটিকাটে প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার, স্টামফোর্ড, নিউ হ্যাভেন, ব্রিজপোর্ট, হার্টফোর্ড, ড্যানবুরি, সাউথ উইন্ডজোর, বৃস্টল, টোরিংটনও চেশায়ার শহরে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক বেশি। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত পড়েছে প্রবাসীরা।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ২ শত ৭৭ জন। গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত কানেকটিকাটে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭শত ৮১ জনে।

করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিতে রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে জরুরি অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। চলাফেরও সীমিত করা হয়েছে। তবুও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

কানেকটিকাটে ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে সর্বোচ্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে আক্রান্ত ৪ হাজার ১ শত ৩৬ জন, মারা গেছে ১৩২ জন। হার্টফোর্ড কাউন্টিতে আক্রান্ত ১ হাজার ৪৫ জন, মারা গেছে ৪৮ জন। লিচফিল্ড কাউন্টিতে আক্রান্ত ২ শত ৫৫ জন মারা গেছে ৯ জন, নিউ হ্যাভেন কাউন্টিতে আক্রান্ত ১ হাজার ৬ শত ৬৪ জন, মারা গেছে ৬০ জন।

Advertisement

মিডলসেক্স কাউন্টিতে আক্রান্ত ১ শত ৫০ জন, মারা গেছে ৭ জন। টোলান্ড কাউন্টিতে আক্রান্ত ১ শত ১১ জন, মারা গেছে ১৩ জন, উইন্ডহাম কাউন্টিতে আক্রান্ত ৪৩ জন, মারা গেছে ১ জন এবং নিউ লন্ডন কাউন্টিতে আক্রান্ত ৮৫ জন, মারা গেছে ৪ জন। এছাড়াও ২৯২ জন আক্রান্ত রোগী ও ৩ জন মৃত্যুর তালিকা এখনো চূড়ান্ত তালিকায় যুক্ত করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৪১২ এবং মারা গেছে ১২ হাজার ৮৫৪ জন।

অপরদিকে, করোনা থেকে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ২১ হাজার ৬৭৪ জন। তবে করোনায় আক্রান্ত ৯ হাজার ১৬৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটিতে গত একদিনে নতুন করে ১৮৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় এখন পর্যন্ত একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯। বিশ্বের ৮২ হাজার ৭৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা। অপরদিকে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৪২ জন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিউইয়র্কে।

মঙ্গলবার নিউইয়র্কে নতুন করে ৭৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে ওই অঙ্গরাজ্যে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৮৯। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৬। নিউইয়র্কে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ১৪৭। যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো অঙ্গরাজ্যেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।

এমআরএম/জেআইএম