প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্তিতিতে বিশ্বব্যাপি লকডাউন, কারফিউসহ জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১২ শাবান) ভারতের ঐতিহ্যবাহী সর্বোচ্চ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম আবুল কাসেম নোমানি লকডাউন ও শবে বরাত প্রসঙ্গে দুইটি জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন। আর তাহলো-
Advertisement
শবে বরাত প্রসঙ্গে৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শাবান মাসের ১৪ তারিখ। সে আলোকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতটিই শবে বরাত। এ রাতে জিকির-ইবাদত, দোয়-ইসতিগফার এবং পরবর্তী দিন (শুক্রবার) রোজা পালনের ফজিলত বিভিন্ন হাদিস থেকেই প্রমাণিত।
তবে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে কোনো আমল হাদিসে প্রমাণিত নেই। এ জন্যে এ রাতে কবরস্থানে যেতে উৎসাহিত করা হয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল একবার একাকি কবরস্থানে যাওয়ার কথা বর্ণনায় পাওয়া যায়। এ কারণে এ রাতে অনেক মানুষ সম্মিলিতভাবে কবরস্থানে বা মসজিদে গমন করে থাকে এবং বিভিন্ন আমল করে থাকে।
ফলে সকল মুসলমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে-বর্তমান (বৈশ্বিক মহামারি করোনা) পরিস্থিতিতে যেখানে জরুরি আমল (জামাআতে নামাজ ও জুমুআ ইত্যাদি) এর জন্য বাইরে বের হতে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তাই-- যে কেউ যেন শবে বরাত উপলক্ষ্যে মসজিদে অথবা কবরস্থানে বের হওয়া থেক বিরত থাকুন।- ঘরের শিশু ও যুবকদের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত রাখুন।- মোমবাতি, আতশবাজি বা আলোক সজ্জা করে গোনাহ ও রুসুম পরিহারে শতভাগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।- যতটুকু সম্ভব নফল নামাজ, দোয়া ও ইসতেগফারের আমল ঘরে আদায় করুন।- সম্ভব হলে শুক্রবার ১৫ শাবান রোজা রাখুন। এটি মুসতাহাব আমল।- এর বাইরে সব ধরনের সম্মিলিত ও মনগড়া অপ্রমাণিত আমল পরিপূর্ণরূপে বর্জন করুন।
Advertisement
>> লকডাউন প্রসঙ্গেকরোনা ভাইরাসের তীব্র প্রাদুর্ভাবের এ পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও লকডাউন কার্যকর রয়েছে। এখনো বিভিন্ন মানুষের ব্যাপারে এ অভিযোগ শোনা যাচ্ছে যে, তারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাইরে বের হচ্ছে। সুতরাং সব মুসলমানের কাছে অনুরোধ, এ সম্পর্কে দুটি বিষয় মেনে চলা একান্ত আবশ্যক। আর তাহলো->> সরকারি আইন-কানুন মেনে চলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ববোধই নয় বরং ইসলামি শরিয়তের দাবিও বটে। কেননা এ সময়ের রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার অন্যতম লক্ষ্য হলো- দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা।
>> বৈশ্বিক মহামারি করোনার ক্ষেত্রে শরিয়ত তথা হাদিসের নির্দেশনা হলো- আক্রান্ত অঞ্চলের লোক বাইরে যাবে না এবং বাইরের লোক আক্রান্ত অঞ্চলে আসবে না। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস এবং হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং অন্যান্য সাহাবাদের কর্মপন্থা থেকেও পথনির্দেশনা পাওয়া যায়।
সুতরাং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বনে সচেতন থাকা ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা ইসলামি শরিয়ত এবং রাষ্ট্রীয় সংবিধান তথা উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে পালন করা জরুরি।
এজন্য কোনো মুসলমান রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবেন না ও স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদাসিনতা প্রদর্শন করবেন না। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা মেনে চলা ইসলামি শরিয়তের বিধান মেনে চলার নামান্তর। এগুলো আমাদের সেই ঈমানি বিশ্বাসের পরিপন্থী নয় যে, যা কিছু হয়, স্রেফ আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।
Advertisement
ইসলামি শরিয়ত যেভাবে আমাদের এ আকিদা দিয়েছে যে, শরিয়ত মোতাবেক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করা। পাশাপাশি বেশি বেশি তাওবা-ইসতিগফার, দোয়া-দরূদ পড়া এবং কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি মনোযোগ দেয়া। আল্লাহ তাআলার কাছে নিজেদের জন্য ও পুরো বিশ্বের জন্য রোগমুক্তির দোয়া করুন। মহান আল্লাহ আমাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন এবং সবার ওপর রহমত বর্ষণ করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ