ব্রিটেনে করোনাভাইরাস বিস্তারের পেছনে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ইসকনের (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) পরোক্ষ ভূমিকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ কিছুদিন ধরে নানারকম আলোচনা-সমালোচনার পর এই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, মার্চে এক সমাবেশে যোগ দেয়া তাদের পাঁচজন সদস্য করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
Advertisement
ইসকন ইউকে শাখার শীর্ষ কর্মকর্তা প্রাঘোসা দাসের বরাত দিয়ে গোষ্ঠীটির প্রকাশনা ইসকন নিউজে বলা হয়েছে, ১২ মার্চ লন্ডনের উপকণ্ঠে ইসকনের এক মন্দিরে তাদের একজন গুরুর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে প্রায় হাজার খানেক সদস্য হাজির ছিলেন।
দু'দিন পর ১৫ মার্চ লন্ডনের কেন্দ্রে তাদের আরেকটি মন্দিরে শ্রুতিধর্ম প্রভু নামে প্রয়াত ওই গুরুর স্নরণসভাতেও কয়েকশ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ইসকন স্বীকার করেছে এখন পর্যন্ত তাদের যে ২১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং যে পাচজন মারা গেছেন- তারা সবাই ওই দুটি অনুষ্ঠানে শরীক হয়েছিলেন।
বলা হয়েছে- আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী সদস্য রয়েছেন, তাদের অনেকের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের কোটায়। শেষকৃত্যে অংশ নেয়া তাদের আরো সদস্য যে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন - সে আশঙ্কার কথা ইসকন কর্তৃপক্ষ উড়িয়ে দেননি।
Advertisement
তবে আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে একশ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে যে দাবি করা হচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসকন।
ইসকনের সমালোচনা
একই সাথে ১২ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে এত বড় সমাবেশ কেন তারা করলো- তার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছে ইসকন কর্তৃপক্ষ। ইসকন নিউজ বলছে, তাদেরকে দোষারোপ করার আগে সমাবেশের সময়কালকে বিবেচনা নেয়া উচিৎ। সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, প্রাঘোষাদাসকে উদ্ধৃত করে লিখেছে ইসকন নিউজ।
তাদের যুক্তি - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ২৩ মার্চভ। কিন্তু তাদের ওই শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি হয়েছে তারও ১০দিন আগে। এতে দাসের বরাত দিয়ে আরো বলা হয়েছে, দয়া করে ইউকে যাত্রার ভক্তদের প্রতি রুষ্ট হবেন না। যে কাজ তাদের করার কথা ছিল না, সেটা তারা করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি। তারা মনে করেছেন, তাদের যেটা করা কর্তব্য সেটাই তারা করছেন। তাদের জন্য প্রার্থনা করুন।
Advertisement
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনকি ইসকনেরই অনেক সদস্য নামে-বেনামে এই সময়ে এত বড় জমায়েত আয়োজনের জন্য গোষ্ঠীর নেতৃত্বের সমালোচনা করছেন। ব্রিটেনে ইসকনের সমাবেশ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই খবর এমন সময় সামনে এলো যখন দিল্লিতে মার্চের প্রথমার্ধে তাবলিগ জামাতের এক সমাবেশকে ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সে কারণেই, ভারতের বেশ কিছু মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রিটেনে ইসকনের সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য প্রধানত শিনচিওঞ্জি চার্চ অব জেসাস নামে একটি খ্রিস্টান গোষ্ঠীকে দায়ী করা হচ্ছে। তাদের একজন নেতার শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন কয়েক হাজার সদস্য, এবং বলা হচ্ছে সেখান থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণের সূত্রপাত। বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/এমএস