আন্তর্জাতিক

মুম্বাইয়ে মাস্ক না পরলেই গ্রেফতার

করোনাভাইরাস মহামারিতে হট স্পটে পরিণত হওয়া ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে সুরক্ষা মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বুধবার মুম্বাই পৌর কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ জারি করে বলেছে, কেউ মাস্ক পরার এই নিয়ম না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি গ্রেফতারও করা হতে পারে।

Advertisement

জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব ধরনের খোলামেলা জায়গা, অফিস, বৈঠক এমনকি গাড়ির ভেতরেও অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বাই পৌর কর্তৃপক্ষ।

গ্রেটার মুম্বাইয়ের পৌর কমিশনার প্রবীণ পরদেশীর স্বাক্ষরিত এই নির্দেশে বলা হয়েছে, ওষুধের দোকানে পাওয়া মানসম্মত মাস্ক, ঘরে তৈরি অথবা ধোয়া যাবে এমন মাস্কও ব্যবহার করা যাবে।

বুধবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে অত্যাবশকীয় পণ্য কিনতে বাড়ির বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে চণ্ডিগড়, নাগাল্যান্ড ও ওড়িষ্যায় মাস্ক পরা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত দুই কোটিরও বেশি মানুষের মুম্বাইয়ে ও আশপাশের এলাকায় এখন পর্যন্ত ৭৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ৫০ জন।

Advertisement

দেশটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্র প্রদেশে। এই রাজ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজারের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। বুধবারও মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তিতে দুজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই বস্তিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯ জনে পৌঁছেছে।

গত মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লক ডাউন ঘোষণা করেন। তবে দেশটির বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মুম্বাইয়ে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় এই লক ডাউন আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে মহারাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এদিকে, বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় এক ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। এই কনফারেন্সে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। মোদি বলেছেন, দেশজুড়ে জারিকৃত লকডাউন ১৪ এপ্রিল প্রত্যাহার করে নেয়া সম্ভব নয়।

সর্বদলীয় এই ভিডিও কনফারেন্সে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিনি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। তারপরও লক ডাউন প্রত্যাহার করে নেয়া সম্ভব হবে না। কোভিড-১৯ এরপর জীবন আগের মতো হবে না। আমাদের সামনে প্রাক-করোনা এবং করোনা পরবর্তী সময়ে বিভক্ত হবে।

Advertisement

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এই সময়ে ব্যাপক আচরণগত, সামাজিক ও ব্যক্তিগত পরিবর্তন আসবে। এখন প্রত্যেকটি জীবন বাঁচানোই সরকারের অগ্রাধিকার। দেশে বর্তমানে সামাজিক জরুরি অবস্থা চলছে। আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

১৩০ কোটি মানুষের এই দেশটিতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে; যা আগামী ১৪ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় চলতি সপ্তাহেই এই লক ডাউনের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবেন মোদি। তার আগে মঙ্গলবার সর্বদলীয় এই ভিডিও কনফারেন্সে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলেন তিনি।

দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরাও লকডাউনের সময় বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি ভারতে সর্বোচ্চ আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।

ভারতে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ২৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এই ভাইরাসে মারা গেছেন অন্তত ১৪৯ জন।

সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি।

এসআইএস/এমএস