প্রায় দু'মাস ধরে লকডাউন ছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর। গত ৩১ ডিসেম্বর উহানেই প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে।
Advertisement
ফলে করোনার বিস্তার রোধ করতে উহান শহরকে চীনের অন্যান্য শহর থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানকার মানুষ শহর ছেড়ে বের হতে পারছিল না।
কিন্তু বুধবার লকডাউন তুলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার মধ্যরাত থেকে সকল বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। লকডাউন তুলে নেওয়ায় লোকজন এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
জানুয়ারির শেষ দিক থেকেই পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল উহান নগরী। চীনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের অধিকাংশই ছিল ওই শহরের। ক্রমাগত মৃত্যু ওই শহরকে ভুতুরে নগরীতে পরিণত করেছিল।
Advertisement
উহান শহরে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওই শহরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ চীনে যত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই উহানের বাসিন্দা।
চীন থেকে এই ভাইরাস এখন বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছে ৮২ হাজার ৭৪ জন। এছাড়া এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৪২ জন।
প্রথমদিকে, করোনায় চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেও এখন করোনার ভয়াবহতা দেখছে অন্যান্য দেশগুলো। বর্তমানে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখছে ইতালি।
এদিকে, হুবেই প্রদেশে কড়াকড়ি আরোপের কারণে গত কয়েক মাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। করোনার উৎপত্তিস্থল উহানে গত ২১ দিনে মাত্র তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
Advertisement
এদিকে, লকডাউন তুলে নেওয়ার খবরে স্বস্তি পেয়েছেন উহানে আটকা পড়া লোকজন। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ ট্রেনে করে উহান ছাড়তে পারবেন। অপরদিকে, ১০ হাজারের বেশি ভ্রমণকারী বিমানে করে উহান ত্যাগ করবেন।
এই মানুষগুলো দীর্ঘ দু'মাসের বেশি সময় ধরে উহানে আটকা পড়েছিলেন। লিউ শিয়াওমিন নামে এক অভিবাসী শ্রমিক বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে, আমি আজ বাড়ি ফিরতে পারব। উহান থেকে প্রথমে তারা বেইজিংয়ে যাবেন। সেখানে তাদের দু'দফা পরীক্ষার পর বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার পর্যন্ত চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮০২ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৩৩৩। তবে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৭৭ হাজার ২৭৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। অপরদিকে, ১৮৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
টিটিএন/পিআর