আইন-আদালত

বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে রায় পড়ে শোনানো হচ্ছে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে রায় পড়ে শোনাচ্ছেন আদালত। এর আগে তাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়।

Advertisement

এর আগে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম জুলফিকার হায়াৎ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর বেলা ১টা ৫ মিনিটের দিকে তাকে প্রিজন ভ্যানে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার (৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি মাজেদকে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে পলাতক ছিলেন। ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে বাংলাদেশ পুলিশ।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় সপরিবারে হত্যার শিকার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি আবদুল মাজেদ।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএস) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।

Advertisement

১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে পাঁচ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।

২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়।

Advertisement

পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

জেএ/এসআর/পিআর