দাবি আদায়ে বাঙালি সবসময় যতটা সোচ্চার, ভালোবাসা প্রকাশে ততটা নয়। কবি নজরুল ইসলামের পদ্ধতিটাই বোধ করি ভালো! সেই যে তিনি বলছেন, ‘আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয় / আমার কথার ফুল গো / আমার গানের মালা গো / কুড়িয়ে তুমি নিও।’ অবারিত ভালোবাসা। যার যতটুকু দরকার কুড়িয়ে নাও, কোনো বাধা নাই।
Advertisement
করোনাকালের অঢেল অবসরে মাথায় কত ভাবনা আসে! কাকে বলি, কেই ই বা শোনে। তাই ‘নজরুলীয় পদ্ধতি’তে একটা ভাবনা সামাজিক মাধ্যমের আকাশে ছড়িয়ে দিলাম ; বললাম এই করোনা সংকটে কতজনইতো প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে মানবিক সাহায্য দিচ্ছেন। তো আমাদের মন্ত্রী, এমপি, বিভিন্ন নির্বাচনে যারা প্রার্থী হন, ভোটারদের জন্য জীবন দেয়াই যাদের ব্রত সেই ‘তাহারা কোথায়? ‘তারা কেন এই দুঃসময়ে মানবিক সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না। মন্ত্রী-এমপি রা তাদের একমাসের বেতন কেন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দিচ্ছেন না?
প্রতিক্রিয়া হলো। কারও মন্তব্য: খোঁচান ক্যান? কারও মন্তব্য: আমরা তো মাঠে আছি, জনগণের জন্য কাজ তো করছি। প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা যে মাঠ ছেড়ে যেতে পারবেন না, বুঝি। কিন্তু সব জায়গায় অবস্থা তো একরকম না।
দেশের বনেদী সিলেট জেলার চিত্র তুলে ধরে একটি সংবাদপত্র লিখছে, ...জেলার ছয়জন সংসদ সদস্যের মধ্যে তিনজনই ‘নিখোঁজ’। এই দুঃসময়েও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি তাদের। প্রশাসনের মাধ্যমে আসা সরকারি ত্রাণেই নিজেদের ‘কৃতিত্ব’ খুঁজছেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সিলেটের মধ্যে সবার আগে অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠান সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। দুই দফায় তিনি সাড়ে তিন হাজার অসহায়ের বাসাবাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন। তার এই উদ্যোগের পর সিলেটে এখন অনেক বিত্তবান এগিয়ে এসেছেন খাদ্যসহায়তা নিয়ে।
Advertisement
সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসও এলাকায় দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজস্ব তহবিল থেকে বিতরণ করে যাচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। সিলেট-৪ আসনের এমপি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ঢাকায় অবস্থান করলেও তার নির্বাচনী এলাকায় অব্যাহত রেখেছেন ত্রাণ তৎপরতা। এই তিন এমপি ছাড়া সংকটময় এই মুহূর্তে বাকিদের কোনো তৎপরতা নেই নিজেদের নির্বাচনী এলাকায়।
সিলেট-২ আসনের এমপি গণফোরামের মোকাব্বির খান এলাকায় অনুপস্থিত। এলাকার মানুষের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই। অনেকে তাকে ‘নিখোঁজ’ দাবি করে সন্ধান কামনা করছেন। সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের অবস্থাও একই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণকৃত ত্রাণ সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে, এমনটাও মাইকিং করে প্রচার করছেন তার কর্মীরা। সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও খুঁজছে তার নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণ। গত ২৯ মার্চ তিনি ফেসবুকে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি সবাইকে বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানান। দিনমজুর ও অসহায়দের জন্য উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে দাবি করে তিনি এই কাজে এলাকার বিত্তবানদেরও অংশ নেয়ার অনুরোধ জানান।’
শেরপুরের নালিতাবাড়ী-নকলার এমপি বেগম মতিয়া চৌধুরী শুরু থেকেই সক্রিয় এলাকায়। প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে, কিন্তু তিনি দলকে সক্রিয় রেখেছেন এবং তার ব্যক্তিগতসহায়তা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা অসচ্ছল মানুষের পাশে রয়েছেন। কিশোরগঞ্জে খুবই সক্রিয় দেখি সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুকে। সেই জন্যই বলছিলাম সব জায়গায় চিত্র একরকম নয়। যারা করছেন তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ।
উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীগণ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত। রাষ্ট্র তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। ভোটাররা এমপি সাহেবদের প্রতি আস্থা রেখেছেন এই ভেবে যে, দুঃসময়ে তাকে পাশে পাওয়া যাবে। কাজেই এই দুঃসময় তো মানুষের প্রতি তাদের ব্যক্তিগত ঋণ শোধেরও কাল।
Advertisement
দেশে মোট মন্ত্রী : ৪৮ জন প্রধানমন্ত্রীসহ, এর মধ্যে মন্ত্রী ২৫ জন, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী; ৩ জন উপমন্ত্রী। আমরা একটু দেখি রাষ্ট্র তাদের কী কী সুবিধা দেয়। একটু চোখ বুলাই শুধু বেতনভাতা ও আর্থিক সুবিধার দিকে : দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, একজন মন্ত্রী বেতন পান মাসে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা এবং চিফ হুইপরাও সমান বেতন পান। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী কাউকেই তাদের বেতনের জন্য কোনো কর দিতে হয় না। এছাড়া একজন মন্ত্রী আরও যেসব সুবিধা পান, দৈনিক ভাতা: দুই হাজার টাকা , নিয়ামক ভাতা: মাসিক ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল: ১০ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা। সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি। ঢাকার বাইরে অফিসিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করে। সরকারি খরচে রেলভ্রমণ ও বিদেশভ্রমণ। বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করে। সরকারি খরচে বাসায় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। সরকারি বাসায় না থাকলে: বাড়িভাড়া বাবদ ৮০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ও সব ধরনের সেবা খাতের বিল। বিমানভ্রমণের জন্য বীমা সুবিধা আট লাখ টাকা। বাসস্থান থেকে অফিস বা অফিস থেকে বাসস্থানে যাতায়াতের খরচ পান। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ খরচও পান। এছাড়া অন্তত দুইজন গৃহকর্মীর খরচ পান।
প্রতিমন্ত্রীদের বেতন প্রতি মাসে ৯২ হাজার টাকা, করমুক্ত। তারাও আরও পান দৈনিক ভাতা: দেড় হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা: ৭ হাজার ৫০০ টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল: সাড়ে ৭ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা। বিনাভাড়ায় সরকারি বাসভবন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করে। সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। সরকারি বাসায় না থাকলে: বাড়িভাড়া বাবদ ৭০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ সব ধরনের সেবা খাতের বিল ও বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ।
একজন উপমন্ত্রী বেতন পান ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। কোনো কর দিতে হয় না। দৈনিক ভাতা: দেড় হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা: পাঁচ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল: সাড়ে ৫ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা। বিনাভাড়ায় সরকারি বাসভবন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করে। সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। সরকারি বাসায় না থাকলে: বাড়িভাড়া বাবদ ৭০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ও সব ধরনের সেবা খাতের বিল।
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে, তারা আরও কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পান। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পান সেগুলো হচ্ছে: মাসিক বেতন ৫৫,০০০ টাকা। নির্বাচনী এলাকার ভাতা প্রতিমাসে ১২,৫০০ টাকা। সম্মানী ভাতা প্রতিমাসে ৫,০০০ টাকা। শুল্কমুক্তভাবে গাড়ি আমদানির সুবিধা। মাসিক পরিবহন ভাতা ৭০,০০০ টাকা। নির্বাচনী এলাকায় অফিস খরচের জন্য প্রতিমাসে ১৫,০০০ টাকা।প্রতি মাসে লন্ড্রি ভাতা ১,৫০০ টাকা। মাসিক ক্রোকারিজ, টয়লেট্রিজ কেনার জন্য ভাতা ৬,০০০ টাকা। দেশের অভ্যন্তরে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১২০,০০০ টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকা। বাসায় টেলিফোন ভাতা বাবদ প্রতিমাসে ৭,৮০০ টাকা। সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেল আছে।
একজন সংসদ সদস্য প্রতিবছর চার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ পাবেন। এই থোক বরাদ্দের পরিমাণ আগে ছিল দুই কোটি টাকা। রাজনীতির পাশাপাশি যারা ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের কাছে এই বেতন ভাতা আর্থিক সুবিধা হয়তো তেমন কিছু নয়। কিন্তু এই দেশ তার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব পুরোটাই এই রাষ্ট্র পরিচালকদের দিয়েছে।
আমার প্রস্তাবনাটি ছিল : করোনার এই দুঃসময়ে দেশের সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যগণ তাদের এক মাসের বেতন ভাতা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দিন। তাদের সাথে যদিযুক্ত হন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সম্মানিত উপদেষ্টা, মাননীয় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার তাহলে বিষয়টি কতই না ভালো হয়। উল্লেখ করা ভালো, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আমাদের কোনো কোনো উপদেষ্টা কোনো ধরনের বেতন ভাতা গ্রহণ করেন না। টাকার অংক যাই হোক, এই দুঃসময়ে সম্মিলিত এই ঘোষণা এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য আগামী ১৮ এপ্রিল সংসদ অধিবেশন ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি। প্রত্যাশা করি, এই অধিবেশনে বা তার আগেই ঘোষণা আসতে পারে আমাদের মন্ত্রী সাংসদদের কাছ থেকে।
এর মধ্যেই জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার সংসদ সদস্য হিসেবে আগামী তিন মাসে প্রাপ্য তাদের বেতন-ভাতা-সুযোগ-সুবিধাদির সমুদয় এবং পরবর্তী নয় মাসের বেতন-ভাতা-সুযোগসুবিধাদির অর্ধেক পরিমাণ সরকারের করোনা তহবিলে জমা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ধন্যবাদ দুজনকেই। শুরুতো হলো।
দৃষ্টান্ত আছে দেশের বাইরেও। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সব সাংসদের বেতন আগামী এক বছরের জন্য ৩০% ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, লোকসভা ও রাজ্যসভার সব সাংসদের বেতন ছাঁটাই হবে ৩০%। ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিটি রাজ্যের রাজ্যপালরা স্বেচ্ছায় তাঁদের বেতনের ৩০% জাতীয় করোনা ত্রাণ তহবিলে দান করবেন বলেছেন। এ ছাড়া সাংসদদের এলাকায় উন্নয়নের জন্য যে তহবিল থাকে, আগামী দু'বছরের জন্য তা বন্ধ থাকবে। ওই তহবিলের সব টাকা করোনা ত্রাণ খাতে ব্যবহার করা হবে।
তুরস্কের নেতা এরদোগান তাঁর ৭ মাসের বেতন দান করেছেন করোনা তহবিলে। যারা নির্বাচিত, যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন তাদের দিকে সহজেই আঙুল তোলা যায় কিন্তু এর বাইরে যারা ‘তাহারা কোথায়‘? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবকটি আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ১৮৪৮ জন। এই ১৮৪৮ জনই যখন নির্বাচনে প্রচারনায় নেমেছিলেন তারা তো বলেছিলেন, তারা ভোটারদের জন্য জীবন দেবেন। এদের মধ্যে ৩০০ জন এমপি হয়েছেন। প্রশ্ন বাকি ১৫৪৮ জন এখন কোথায়? এ কথা সত্যি, একজন নির্বাচিত এমপির কাছে যা’ প্রত্যাশা, যিনি এমপি হতে পারেননি তার কাছে প্রত্যাশা এক রকম নয়। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গেলেও তার দায়িত্ব তো শেষ হয়ে যায় না। আগামী নির্বাচনে হয়তো তিনি আবার প্রার্থী হবেন, আবার নানা প্রতিশ্রুতি দেবেন। কিন্তু বিষয়টি হয়ে গেল এই রকম, পাস করলে আছি নাইলে নাই। আমি নিশ্চিত ভোটাররাও এসব মনে রাখবেন।
এই মৌসুমী নির্বাচন আক্রান্তদের অবস্থাটি কেমন, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এক পত্রিকার রিপোর্টে। বলা হচ্ছে : করোনা সংক্রমণের কারণে স্থগিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ৮০ ভাগ কাউন্সিলর প্রার্থীই অনেকটা লাপাত্তা। এলাকায় তাদের দেখা মিলছে না। এমনকি সামাজিক কার্যক্রমেও তাদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নানা কৌশলে ভোটের প্রচারণা চালিয়েছেন তারা।
এই লাপাত্তারা করোনাকাল কেটে গেলে কোন মুখ নিয়ে আবার ভোটারদের সামনে দাঁড়াবেন?
‘....ওরে হত্যা নয়, আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন...’ বলেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বলেছিলেন : কোরবানি যদি মানবিক শক্তির উদ্বোধন না ঘটায় তাহলে সেটি পশু হত্যার চাইতে বেশি কিছু নয়। তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও। যে রাজনীতিতে শুধু পাস - ফেল, প্রাপ্তি-প্রাপ্তির সমীকরণ সেটাকে রাজনীতি বলা যায় না। রাজনীতি হচ্ছে মানবিক সংস্কৃতির সর্বোচ্চ রূপ, এখানেও মানবিক শক্তির উদ্বোধন চূড়ান্ত শর্ত। যারা এই রাজনীতি ধারণ করেন, এই দুঃসময়ে তাদের প্রণতি জানাই। কারণ তাঁরাই আমাদের আশ্রয়, ভরসার জায়গা। আর যারা লাপাত্তা, নিখোঁজ? উচ্চকণ্ঠেই প্রশ্ন তুলি ‘তাহারা কোথায়’? এই রাষ্ট্র, আমাদের সংবিধানই এই প্রশ্ন তোলার অধিকার আমাকে দিয়েছে।
লেখক : এডিটর ইন চিফ, টিভি টুডে
এইচআর/বিএ/পিআর