জাতীয়

বিপদের দিনে মরদেহ দাফনে প্রস্তুত আলেম টিম

করোনাভাইরাস সংক্রমণে কারো মৃত্যু হলে জানাজা-দাফন-কাফন নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিল সমস্যা। নিকটাত্মীয়রাও এগিয়ে আসছে না মরদেহ দফনে। আর অজ্ঞাত কোনো মরদেহের ক্ষেত্রে ঘটছে আরও অমানবিক দৃশ্য। তবে এবার করোনা আক্রান্তদের জানাজা ও দাফন সঠিক ইসলামী নিয়মে সম্পন্ন করতে এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন আলেম।

Advertisement

প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকায় তারা এ কাজটি শুরু করেছেন। তবে ঢাকার বাইরেও অনেক জেলার আলেমরা মরদেহ দাফন করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ কাজের উদ্যোক্তা গাজী ইয়াকুব। কিন্তু পিপিই সংকটে এখনই জেলা পর্যায়ে সম্ভব হচ্ছে না। তাই কেউ পিপিই সরবরাহ করলে এ উদ্যেগটি জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মাওলানা গাজী ইয়াকুবের নেতৃত্বে কয়েকজন আলেম এমন মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- এইচ এম লুৎফর রহমান, হিফজুর রহমান, সালমান বিন সাজিদ, নুরুননাবী নুর, কারী ওসামা বিন নিজাম ও মোহাম্মদ রাফী।

এ বিষয়ে মাওলানা গাজী ইয়াকুব বলেন, করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী মারা গেলে তাদের জানাজা-দাফনের প্রয়োজনে আমাদের (০১৯২০৭৮১৭৯২) নম্বরে ফোন করলে আমরা সেখানে পৌঁছে যাব। তার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করব। কারো যদি কাফনের কাপড় প্রয়োজন হয় আমরা তারও ব্যবস্থা করব।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর তিন-চার ঘণ্টা পর তার শরীরে আর জীবাণু থাকে না। এ জন্য কেউ ফোন করলে আমরা তিন-চার ঘণ্টা পর তার জানাজা-দাফনের ব্যবস্থা করব।

মাওলানা ইয়াকুব বলেন, করোনা প্রদুর্ভাব শুরুর পরে প্রথমে নগরবাসীকে সচেতন করতে লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ করেছি। পরে প্রায় ২০০ মেশিন দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করছি। মসজিদে মুসল্লিদের জন্য স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও করেছি। আমরা প্রথমে খাদ্য সামগ্রী ও পরে রান্না করা খাবারও বিতরণ করেছি।

তিনি বলেন, এখন সবথেকে বড় অমানবিক বিষয় হলো করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে কেউ স্পর্শ পর্যন্ত করছে না। বাবা ছেলের এবং ছেলে বাবার লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। তাই আমরা মরদেহ দাফনে এগিয়ে এসেছি।

গাজী ইয়াকুব বলেন, আমরা বারডেমের পাশে নোয়াখালীর একজনের জানাজা পড়িয়েছি। পরে লাশ নিয়ে তারা গ্রামে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি জেলা থেকে আলেমরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা একই কাজে আগ্রহী। তবে তাদের পিপিই সরবরাহের জন্য আমাকে বলেছেন। কিন্তু আমার কাছে তো এত টাকা নেই। তাই কেউ পিপিই দিয়ে সাহায্য করলে আমি জেলায় জেলায় পৌঁছে দিব। এতে দেশের জেলা পর্যায়েও লাশ দাফনের সঠিক ব্যবস্থা হবে।

Advertisement

এই মহৎ কাজ করতে গিয়েও এখন পর্যন্ত দুইবার ধোকার শিকার হয়েছেন এই আলেম। তিনি জানান, একবার খিলগাঁও থেকে ফোন করা হলে আমরা উপস্থিত হয়ে জানতে পারি লাশ নিয়ে বগুড়ার দিকে চলে গেছে। আবার ফতুল্লায়ও একবার এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই বিভ্রান্তকর তথ্য না দিতে সবার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

তিনি দেশের আলেম সমাজকে মরদেহের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এমএফ/জেআইএম