বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মুক্তির দিন থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি।
Advertisement
টানা ২৫ মাস ১৭ দিন কারাবাসের পর ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সেদিন থেকে হিসাব করলে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) তার ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড শেষ হয়েছে। তিনি চাইলে বুধবার (৮ এপ্রিল) কোয়ারেন্টাইন ভাঙতে পারেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সঙ্গনিরোধ অবস্থায় থাকবেন তিনি, যেমনটি আছেন গত ১৪ দিন ধরে।
দলীয় সূত্রমতে, মুক্তির দিন সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এফ সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন খালেদা জিয়াকে দেখে যান।
ওইদিন সন্ধ্যায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান সুযোগ পান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার।
Advertisement
এর পরের ১৩ দিন দলের কোনো নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দুইবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার (০৬ এপ্রিল) ডা. মামুন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
এ ছাড়া ৩ এপ্রিল শুক্রবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এবং ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা পছন্দের খাবার রান্না করে ফিরোজায় আসেন। তারা কিছু সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাটান। সেটা অবশ্য কোয়ারেন্টাইন নিময় মেনেই।
ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ডের সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খুব একটা বেশি উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিনের কারাবাসের ফলে ভেঙ্গে যাওয়া স্বাস্থ্য রিগেইন করতে পারেননি তিনি। এখনো চলাফেরার ও বাথরুমে যাওয়ার জন্য লোকের সাহায্য প্রয়োজন হয় তার।
তবে চেনা পরিবেশে থাকা এবং অন লাইনের মাধ্যমে নিকট আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে মানসিক শক্তি ফিরে পেয়েছেন তিনি। দেশের বাইরে থাকা ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনীদের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলা, ঢাকায় থাকা ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা এবং দুই/তিন দফা ভাই-বোন এবং তাদের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় মানসিকভাবে অনেকটাই সাঙ্গা অনুভব করছেন খালেদা জিয়া-এমনটিই বলছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
Advertisement
এদিকে পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজীবন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খালেদা জিয়া বাসার আঙ্গিনা ও ছাদে সীমিত পরিসরে চাষ করা সবজি ও ফলমূল খেতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। সে কারণে তিনি কারাগারে যাওয়ার পর বাসা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সিএসএফ সদস্যরা বাসার ছোট্ট বাগান পরিচর্যা করেছেন নিয়মিত। এখন ছাদবাগানের সবজিই তার প্রতিদিনের খাবার। এই মুহূর্তে ফলমূল ছাড়া বাইরের কোনো খারার খালেদা জিয়া খাচ্ছেন না। যেটুকু খাবার তিনি গ্রহণ করছেন, তা দীর্ঘ দিনের পুরোনো শেইফ রতনই রান্না করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিএসএফ সদস্য বলেন, ‘ম্যাডাম এখন অনেকটা ভালো আছেন। দলের নেতাদের বাসায় আসা একদম নিষেধ। মাঝে-মধ্যে শুধু ডাক্তাররা আসেন। গতকাল ডা. মামুন এসেছিলেন। আত্মীয় স্বজনরাও খুব একটা আসেন না। ম্যাডাম রতনের (ব্যক্তিগত শেইফ) রান্না করা খাবার খাচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেদিন (মুক্তির দিন) প্রচুর লোক হয়েছিল। কার কী অবস্থা, সেটা তো আমরা জানি না। সেই জন্য ম্যাডামকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড শেষ হতে চলেছে, এখন দেশের যে অবস্থা, এ অবস্থায় স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সাবধানেই থাকতে হবে’।
কেএইচ/এমআরএম