জাতীয়

পুরান ঢাকার অলিগলিতে স্বেচ্ছায় লকডাউন!

রাত সোয়া ৮টা। আজিমপুর পুরাতন কবরস্থান সংলগ্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের পাশের হক কনফেকশনারির সামনে দিয়ে সোজা নতুন পল্টন লাইন হয়ে ইরাকি কবরস্থানগামী রাস্তাটি লম্বা বাঁশ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে।

Advertisement

বাঁশের ব্যারিকেড ঘেঁষে আড়াআড়িভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) লোগা সংবলিত একটি জিপগাড়ি পার্কিং করা। আজিমপুর মোড় নামে পরিচিত এ এলাকাটি গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকলেও মঙ্গলবার রাত ৮টা না বাজতেই মনে হলো যেন গভীর রাত।

বেসরকারি ডাচবাংলা ব্যাংকের দারোয়ানকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে এদিক-সেদিক তাকাতে দেখা গেল। কৌতূহলবশত সামনে যেতেই সে বললো, ‘স্যার, এ এলাকায় করোনা রোগী ধরা খাইছে। গত দুইদিন আগেই শুনেছি কোন বাড়িতে যেন করোনার রোগী পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী তেমন আমলে নেয়নি। কিন্তু গতকাল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে সবাই ভয়ে আছে। তারওপর আজ রাতে এই যে, এই গাড়িটি থেকে লোক নেমে সোজা ভেতরে গেছে। হয়তো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে।’

আজিমপুর থেকে মাইল খানেক দূরত্বে স্থানীয় বাট মসজিদ এলাকার মুদি দোকানি আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাট মসজিদ এলাকার আশেপাশের অলিগলিতে বাড়িওয়ালারা স্বেচ্ছায় বাঁশের ব্যারিকেড ফেলে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement

আজিমপুর মোড়ের মালেক বেকারি থেকে মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারমুখী রাস্তার মুখেও ব্যারিকেড ফেলে রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। লালবাগের খাজে দেওয়ানসহ একাধিক এলাকায় করোনা রোগী পাওয়া যাওয়ায় বহু রাস্তা এলাকাবাসী নিজেরাই লকডাউন ঘোষণা করেছেন।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত গত একমাসে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মোট ১৬৪ জন রোগী চিহ্নিত হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৪ জন রোগীই রাজধানীর ঢাকার। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও করোনা বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, করোনাভাইরাস ঢাকা মহানগরীর ৩০টি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে পাড়া মহল্লায় গ্রামেগঞ্জে সক্রিয় সামাজিক সার্ভিলেন্স শুরু করতে হবে।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিলম্বে হলেও রাস্তাঘাটে নানা অজুহাতে বাইরে অবস্থান করা মানুষের সংখ্যা কমেছে। যানবাহনের সংখ্যাও কমেছে।

Advertisement

এমইউ/এমএসএইচ/পিআর