জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের ফাসি থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া তার আর কোনো পথ খোলা নেই বলে জানিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
Advertisement
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল মাজেদের পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া কি হবে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, 'তার আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। আপিলের তো একটা সময়সীমা দেয়া থাকে। সে সময় শেষ। এখন সেই সুযোগও নেই। একটা সুযোগ তিনি পাবেন, সেটা হলো- রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তবে এই পর্যায় এসে তিনি ক্ষমা পাবেন কি না, সেটা রাষ্ট্রপতির বিবেচ্য বিষয়।'
'রায় কার্যকরে এখন আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে পদক্ষেপ নেবে। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নেবে সেটাও তাদেরই সিদ্ধান্ত।'
Advertisement
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রায় কার্যকরে আইনি বিধানে যা আছে, সেভাবেই হবে।
আবদুল মাজেদ আপিল করার সুযোগ পাবেন কি না? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার বলা ঠিক হবে না। সেটা ওনার আইনজীবীদের জিজ্ঞেস করেন।
জানা গেছে, আসামি মাজেদের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এদিকে গ্রেফতার হওয়া মাজেদকে আজ আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ এম জুলফিকার হায়াত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
Advertisement
আদালতের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন। তিনি জানান, তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ পর্যায়ে তার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে গত সোমবার (৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি মাজেদকে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশে পলাতক ছিলেন। ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে বাংলাদেশ পুলিশ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় সপরিবারে হত্যার শিকার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি আবদুল মাজেদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন।
১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।
১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
অন্যদিকে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।
পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।
২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়।
পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
এফএইচ/জেডএ/এমএস