দেশজুড়ে

জীবনবাজি রেখে করোনায় অসহায় মানুষদের পাশে ফেনীর এই চেয়ারম্যান

সরকারের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে। কোনো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যদি সৎ হন, তাহলে সম্পদের যতোই অপ্রতুলতা থাকুক, সাধারণ মানুষ অনেকটাই শান্তিতে থাকেন।

Advertisement

এমন সৎ ও কর্মঠ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার ১ নং সিন্দুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর নবী।

চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ছোট ফেনী নদী বিধৌত এই ইউনিয়নকে একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে, পুরো ইউনিয়ন থেকে সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করতে, সর্বোপরি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নুর নবী চেয়ারম্যান।

তার সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষের বসবাস ২৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নে। দাগনভূঁইয়া উপজেলায় আয়তনে সবচেয়ে বড় এই ইউনিয়নে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের। এছাড়া রয়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা-অটো চালক- যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করে পুরো পরিবারের সারাদিনের ভরণ-পোষণ।

Advertisement

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর প্রকাশ হয়। এরপরই প্রাণঘাতী এ ভাইরাস নিয়ে সারাদেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার। করোনার কারণে বাতিল করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উৎসব। বাতিল করা হয় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও।

শুধু তাই নয়, সরকার সারাদেশে সব ধরনের গণজমায়েত হয়- এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বাতিল করার ঘোষণা দেয় এবং অন্যদেরও নির্দেশ দেয়- অনুষ্ঠান বাতিল করার।

করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে। মানুষে মানুষে ছড়ায়। এ কারণে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সারাদেশের মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। প্রথমে ৪ এপ্রিল, পরে ৯ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ছুটির মেয়াদ।

ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন- বিশ্বব্যাপী এখন এটাই করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার বড় উপায়। এই বিষয়টা নিশ্চিত করতেই সরকার এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা দেশজুড়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

Advertisement

২৬ মার্চ সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে থেকেই নিজের ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেন নুর নবী চেয়ারম্যান। ইউনিয়নজুড়ে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং এবং মানুষকে নানাভাবে বোঝানো- সবই করে যাচ্ছেন ১ নং সিন্দুরপুর ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে- খেটে খাওয়া, নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলা। সারাদেশের মত একই চিত্র প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল সিন্দুরপুর ইউনিয়নেও। এই সঙ্কট মোকাবিলায় প্রথম থেকেই অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে ছুটছেন চেয়ারম্যান। অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণে তিনটি ধাপ ইতোমধ্যে শেষ করেছেন তিনি।

সরকারের দেয়া দুই ধাপে খাদ্য সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে। নিজে ইউনিয়ন পরিষদে মানুষদের ডেকে আনেননি, জমায়েত হয়ে যাবে বলে। এতে করে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ে। এ কারণে ত্রাণ নিয়ে, খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে নবী চেয়ারম্যান ছুটে গেছেন অসহায় মানুষের ঘরে।

জাগো নিউজকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এই চেয়ারম্যান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে দুই দফায় আড়াই টন করে পাঁচ মেট্রিক টন খাদ্য সহযোগিতা পেয়েছেন তার ইউনিয়নের জন্য। এছাড়া ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজামউদ্দিন হাজারীর কাছ থেকে পেয়েছেন ৪৫০ ব্যাগ খাদ্যসহায়তা। যেগুলো তিনি পৌঁছে দিয়েছেন গরিব অসহায় মানুষের ঘরে।

তৃতীয় ধাপে তিনি নিজস্ব তহবিল থেকে নিয়মিত খাদ্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন অসহায়দের মাঝে। কি পরিমাণ ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মানুষকে সহযোগিতা করছেন সে হিসাবও রাখতে পারেননি।

নবী চেয়ারম্যান শঙ্কায় রয়েছেন, এখন যে পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজন হয়তো মিটছে। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতি যদি আরো দীর্ঘায়িত হয়, অন্তত আরও দুই সপ্তাহও যদি থাকে, এরপরই দেখা যাবে প্রকৃত সমস্যা। তখন অভাবী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে, দেখা দেবে হাহাকার। ওই সময়ের পরিস্থিতি সামাল দেয়াই হবে সবচেয়ে কঠিন।

সিন্দুরপুর ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা যা পাচ্ছি, নিজাম হাজারী এমপি মহোদয়ের কাছ থেকে যা পেয়েছি এবং নিজের তহবিল থেকে যা সম্ভব হচ্ছে- তা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। প্রকৃত অভাবি যারা, তারা যেন বঞ্চিত না হয়, সঠিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পায়, সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার ইউনিয়ন অনেক বড়। অভাবি মানুষের সংখ্যাও প্রচুর। প্রয়োজনের তুলনায় সহযোগিতার পরিমাণ কম। তবুও বর্তমান সময় নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছি না। আমার চিন্তা করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়লে তখন কি করবো, সেটা নিয়ে। তখন তো চারদিকে হাহাকার পড়ে যাবে।’

সরকার নির্দেশিত কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ইউনিয়নের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। কিন্তু শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ কিছুটা অসচেতন। এ কারণে কাজটাও কঠিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে যাচ্ছি। সরকারের নির্দেশ মেনে সুস্থ থাকার জন্য সবার কাছেই আহ্বান জানাচ্ছি। হাট-বাজারে দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। মুদি ও কাঁচা তরকারির দোকানও কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা রাখার নিয়ম করে দিয়েছি, যেন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে। তবুও মানুষ সচেতন না হলে তো কিছুই করার নেই।’ তিনি ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আহ্বান জানান, সরকারের নির্দেশ মেনে ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। অতি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই।

দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় যখন ত্রাণের চাল নিয়ে হরিলুটের খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে, তখন সিন্দুরপুর ইউনিয়নে যেন ভিন্ন এক উদাহরণ তৈরি করেছেন নুর নবী চেয়ারম্যান। এই ইউনিয়নে ত্রাণের চাল-ডাল মানুষের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ করার পর চেয়ারম্যান নিজের তহবিল থেকেও দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ইউনিয়নের বিত্তবান মানুষদেরও আহ্বান জানিয়েছেন, অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার।

আইএইচএস/