দেশজুড়ে

শিল্পমন্ত্রীর হটলাইনে ম্যাসেজ দিলেই ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার

‘কিস্তিতে অটো কিনেছি আজ ৩ মাস। ১৫ দিন যাবত বসা।। এক ছেলের বয়স দুই বছর। বর্তমানে বড় অভাবে আছি। না পারি কারও কাছে বলতে, না পারি কারও কাছে সাহায্য চাইতে।’

Advertisement

‘ভাই আমি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করি। আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার বাড়িতে খাবার নাই। যদি গোপনীয়ভাবে সহযোগিতা করেন তাহলে উপকৃত হবো।’

‘আমার বাড়িতে দুই দিন ধরে চাল নাই, ধার করে চলতেছি। এমন অবস্থায় আপনার শরণাপন্ন হচ্ছি।’

এই ক্ষুদেবার্তাগুলো (ম্যাসেজ) করোনাভাইরাসের কারণে কষ্টে দিন কাটানো নরসিংদীর মনোহরদীর কয়েকটি মধ্যবিত্ত পরিবারের। যে পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটালেও লোক-লজ্জার ভয়ে খাদ্য সামগ্রীর জন্য হাত বাড়াতে পারেন না। তাই গোপনে শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের হটলাইন নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছেন সহযোগিতার জন্য।

Advertisement

ক্ষুদেবার্তা পাঠানো এমন শতাধিক পরিবারে শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ সময় খাবার হাতে পেয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর সদস্যদের মুখে হাসি ফোটে। তারা প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন।

ক্ষুদেবার্তা দিয়ে খাদ্য সামগ্রী পেয়েছে উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের ফরাজী পাড়ার মধ্যবিত্ত ১৪টি পরিবার। এলাকাটি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরদার সাখাওয়াত হোসেনের বকুলের নিজ গ্রাম। করোনার কারণে কষ্টে দিন পার করলেও কেউ খোঁজ নেয়নি তাদের। তাই ক্ষুদেবার্তা দিয়ে খাদ্য সহায়তা পাওয়ায় অভিভূত তারা।

খাদ্য সহায়তা পাওয়া একজন বলেন, করোনার কারণে দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের কোনো কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। কারো কাছে সাহায্যও চাইতে পারি না। ফেসবুকে মন্ত্রী মহদোয়ের ছেলের পোস্ট দেখে সকালে আমরা হটলাইনে ম্যাসেজ পাঠাই। আর দুপুরেই আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। অভাবের সময়ে এই খাবার দেয়ায় আমরা কয়েকদিন ভালোভাবে কাটাতে পারবো।

এর আগে নরসিংদীর মনোহরদী ও বেলাবো উপজেলায় ৬ হাজার গরিব ও দুস্থ পরিবাররের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের উদ্যোগে রাতের আঁধার বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরিব ও দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন তার ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী।

Advertisement

খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি তেল, একটি সাবান ও একটি মাস্ক।

এর আগে শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫ হাজার মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাদ্য সামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে ১০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। এছাড়াও মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য সংকট দূর করতে চালু করা হয় হটলাইন নম্বর।

শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, কর্মহীন, অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ চলমান আছে। জনসমাগম ও দোকানপাট লকডাউন থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটা স্থবির। তাই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অর্থকষ্টে ভুগলেও পারিবারিক ও সামাজিক মান সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করে সাহায্য নিতে চায় না। আমরা তাদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। কোনো কষ্টে থাকলে আমাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে নাম, ঠিকানা ও পেশা লিখে মেসেজ দিলেই আমরা যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।

সঞ্জিত সাহা/আরএআর/এমকেএইচ