জাতীয়

করোনার চোখ রাঙানিতে বোরো নির্বিঘ্নে ঘরে উঠবে তো?

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এরমধ্যে চলে এসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ফসল বোরো ঘরে তোলার সময়। এরমধ্যে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে- বোরো নির্বিঘ্নে ঘরে উঠবে তো?

Advertisement

করোনা মোকাবিলায় ২৬ মার্চ থেকে দেশে শুরু হয়েছে সাধারণ ছুটি। দুই দফা বেড়ে এই ছুটি শেষ হবে ১৪ এপ্রিল। সরকার সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।

দেশের খাদ্য সরবরাহের বড় অংশটি নিশ্চিত হয় বোরোর মাধ্যমে। সরকারি গুদামে মজুদের মূল অংশটিও নির্ভর করে বোরোর ওপর। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে মূলত বোরো কাটা শুরু হয়।

হওর অঞ্চলে বোরো কাটার জন্য শ্রমিক আসে জামালপুর, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের আসতে পারা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এছাড়া অবনতিশীল করোনা পরিস্থিতিতে যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে, তখন অন্যান্য স্থানেও ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক পাওয়া যাবে কি-না, সেই প্রশ্নও আসছে।

Advertisement

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতিতে বোরো সংগ্রহে কোনো চ্যালেঞ্জই দেখছেন না তারা। কৃষকের ঘরে নির্বিঘ্নে বোরো উঠবে-এটাই আশা তাদের।

এবার বোরোতে ২ কোটি টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশে আসে সাত জেলার হাওর থেকে।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা আমার কৃষকের দুয়ারে সেভাবে আঘাত করবে না বলেই মনে করি। কারণ এই মৌসুমে করোনার ভয়ে রিকশাচালকসহ অতি দরিদ্র শ্রেণির লোক যারা শহরে বাস করত তারা সবাই এখন গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রামে তাদের এখন কাজ নেই। বরং বোরো ধান কাটার সময় তাদের কিছু কাজ জুটবে। অতএব ধান উঠানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’

হাওরাঞ্চলে যাতে শ্রমিক আসতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘হাওর এলাকায় যারা ধান কাটে তারা আসে জামালপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চল থেকে। ওইসব অঞ্চল থেকে শ্রমিক আসার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে পারে। বাধা যাতে না দেয়া হয়, নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য আমরা ওই এলাকায় প্রশাসন ও আমাদের কৃষি যেসব লোকজন আছেন তাদের নিয়ে বসব। শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে হাওর এলাকায় চলাচল করতে পারে সেই উদ্যোগ নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করছি, হাওরেও ধান কাটতে অসুবিধা হবে না।’

Advertisement

‘আমরা এবার কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকা পেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা রিপার ও হারভেস্টার কিনেছি। যন্ত্রপাতিগুলো হাওরে যাচ্ছে।’

নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এখন হাওরে কাদা নেই। এবার যেহেতু বৃষ্টি হয়নি, তাই হাওর এখন শুকনো। তাই এই কমন হারভেস্টার বা রিপার দিয়ে ধান কাটতে কোনো সমস্যা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আর প্লেইন ল্যান্ডে বোরো ঘরে তুলতে সমস্যা হবে-এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তারপরও যদি কোনো সমস্যা হয়, আমরা সেটা সমাধানের উদ্যোগ নেব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, হাওরে মূল ধান কাটা শুরু হবে এপ্রিলের ১৪/১৫ তারিখ থেকে। এটা চলবে পুরো এপ্রিল মাস। অন্যান্য স্থানে বোরো ধান কাটা শেষ হবে আরও পরে।

সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনোসহ বিভিন্ন জেলার হাওরাঞ্চলে ৬ লাখ হেক্টরের মতো জমি আছে। যদি হেক্টর প্রতি ৪ টন করে ফলন হিসাব করা হয়, সেক্ষেত্রে হাওরে মোট ফলন ২৪ লাখ টন হয়। তবে সর্বনিম্ন ২০ লাখ টন চাল আসে হাওর থেকে।

বোরোর মোট ফল ২ কোটি টনের মতো। তাই বোরোতে হাওর থেকে মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ আসে। শুধু হাওর না, সারা দেশেই এবার বোরের ফলন খুবই ভালো বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

আরএমএম/এসআর/জেআইএম