করোনায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার একটি ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আর তাতে ২০ সেকেন্ড ধরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাত পরিষ্কারের বিষয়টি দেখানো হচ্ছে। এ সময়টিতে কল বা টেপ থেকে অবিরাম পানি অপচয় হচ্ছে।
Advertisement
যদিও করোনা সংকটে জীবাণুরোধে হাত ধোয়ার এ পদ্ধতি কিংবা প্রশিক্ষণ যথাযথ কার্যকরী। তবে ঘন ঘন হাত ধোয়ায় যেন কোনোভাবেই বিশুদ্ধ পানির অপচয় না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা আরও বেশি জরুরি। কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আর কিছু থাকুক আর না থাকুক বিশুদ্ধ পানি চাই।
করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষায় হাত ধোয়ার প্রশিক্ষণের ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায় ২০ সেকেন্ড ধরে কল বা টেপ থেকে অবিরাম পানি পড়ছে। অপচয় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ পানি। হাত ধোয়ার পাশাপাশি পানির অপচয় রোধের বিষয়টিও প্রশিক্ষণ ভিডিওতে তুলে ধরা ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কিছুক্ষণ পর পর সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাত ধুয়ে নেয়া। তাই হাত পরিষ্কারে এ সময় পানির টেপ বা কল বন্ধ রাখার ব্যাপারে পূর্ণ সচেতনতাও খুবই জরুরি।
Advertisement
শুধু পানিই নয়, বরং সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার এ সচেতনতায় পানি, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামের অপব্যবহারও যেন না হয় সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে সবার।
বৈশ্বিক মহামারি করোনারভাইরাসের কারণে বিভিন্নভাবে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। আর এ সব পরিবেশ দুষণ থেকে আত্মরক্ষায় বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। বিশুদ্ধ পানি মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম নেয়ামত। বিশুদ্ধ পানি ছাড়া মানুষের জীবনযাপন পুরোই অচল। করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অপচয় রোধেও হতে হবে সচেতন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি এমন এক অমূল্য সম্পদ। এক সময় বিশুদ্ধ পানির জন্য বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। পানি দখল নিয়ে শুরু হবে যুদ্ধ বিগ্রহ। সুতরাং পানির অপচয় রোধ করা খুবই জরুরি।
তাছাড়া ইসলামে ইবাদত-বন্দেগিতে বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব অনেক বেশি। পানি দ্বারা মুমিন মুসলমান পবিত্রতা অর্জন করে। কেননা ইবাদত-বন্দেগির জন্য ওজু করাও ফরজ ইবাদত। তাই সাগরে ওজু করলেও তাতে পানির অপচয়রোধে বিশেষভাবে তাগিদ এসেছে হাদিসে।
Advertisement
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ওজু করছিলেন। আর তাঁর ওজুতে বেশি পানি খরচ হচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা দেখে বললেন হে সাদ! কেন এ অপচয়? হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ওজুতেও কি অপচয় হয়?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ'। এমনকি বহমান নদিতে অজু করলেও (অযথা পানি নাড়াচাড়া করাও অপচয়)। (ইবনে মাজাহ)
অপচয় প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষনা করেন-তোমরা আহার কর ও পান কর কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয় অপচয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১)
পানি অপচয়ে সাবধানতা অবলম্বন যে কারণে জরুরিসুতরাং সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন হাত ধোয়ার সময় পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে সাবান দিয়ে পরিষ্কারের এ ২০ সেকেন্ড সময় কল বা টেপ বন্ধ রাখি। আর এতে সাশ্রয় হবে প্রায় দেড় থেকে ২ লিটার পানি।
কোনো মানুষ যদি প্রতিদিন সর্ব নিম্ন ৫ বারও হাত ধোয় তবে এক জনের দ্বারাই সাশ্রয় হবে প্রায় ১০ লিটার পানি। প্রতিটি পরিবারে যদি ৩ থেকে ৫ এর অধিক মানুষ থাকে তবে কী পরিমাণ পানি সাশ্রয় হবে তা ভেবে দেখলেই উপলব্ধি করা যাবে যে, পানির অপচয় রোধ করা কতটা জরুরি।
মনে রাখতে হবেপানির অপচয় রোধ করা করোনা থেকে কোনো অংশে কম নয় বরং পানির গুরুত্ব আরো অনেক বেশি। সুতরাং সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করার সময় কিংবা ওজুতে বিভিন্ন অঙ্গ ধোয়ার সময় পানির অপচয় রোধ করা সবার জন্য একন্ত আবশ্যক। বিশুদ্ধ পানি সাশ্রয় করে পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করার সক্ষমতা তৈরি হোক সবার অঙ্গীকার।
তাই জীবাণুমুক্ত থাকতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ২০ সেকেন্ড সময়ও পানির টেপ বা কল বন্ধ রাখা জরুরি। আর তাতে সাশ্রয় হবে অনেক পানি। যা সবার কাজে আসবে। অবার অপচয়ের গোনাহ থেকে পাওয়া যাবে মুক্তি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনায় জীবাণূমুক্ত হতে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সময় কিংবা ওজুতে বিভিন্ন অঙ্গ ধোয়ার সময় টেপ বা কল বন্ধ রেখে পানির অপচয় রোধ করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে ধর্মীয় বিধান মতে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম