আন্তর্জাতিক

আইসিইউতে করোনা রোগী কেমন আচরণ করে, অভিজ্ঞতা জানালেন নার্স

বিশ্ব কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। করোনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব। বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ জন। মারা গেছে প্রায় ৭০ হাজার।

Advertisement

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্তের ঘটনা এখন যুক্তরাষ্ট্রে; তিন লাখ ৩৭ হাজার ২৭৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে স্পেনে; এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৬ জন। এছাড়া ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন এক লাখ ২৮ হাজার ৯৪৮।

বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৬৯ হাজার ৪৪৪ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ইতালিতে; ১৫ হাজার ৮৮৭। এরপর ১২ হাজার ৬৪১ মৃত্যু নিয়ে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে আড়াই লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইউরোপের আরেক দেশ যুক্তরাজ্যের অবস্থাও শোচনীয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৮০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন চার হাজার ৯৩৪ জন।

Advertisement

মারণ ভাইরাস করোনায় এখন বিশ্বজুড়েই লকডাউনে প্রায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে সকলকেই নিষেধ করা হচ্ছে ৷ কিন্তু এমনও অনেক মানুষ রয়েছেন, যাদের বাড়ির বাইরে যেতেই হবে ৷ সবার আগেই যাদের নাম উল্লেখ করতে হয়, তারা হলেন চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মীরা।

যুক্তরাজ্যের এক নার্স আইসিইউতে থাকা এক করোনা রোগীর বিবরণ দিয়েছেন ৷ পিপিই পোশাক পরেই করোনা আক্রান্তের সঙ্গে সেলফি পোস্ট করে ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি ৷

জেক স্যাভই নামে ওই নার্স লিখেছেন, যেদিন থেকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগল, আমি ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা পড়ে দেখলাম, কীভাবে নিজেকে আরও সুরক্ষিত রাখা যায় সে ব্যাপারে। কারণ একজন আইসিইউ নার্স হিসেবে আমার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আমি মানসিকভাবেও প্রস্তুত হতে থাকি। পিপিই যেভাবে পরা দরকার, নিয়ম মেনে সেটাও করছি। তবে এখানে কাজ করতে এসে এর আগে কখনও এতটা ভয় পাইনি।

তিনি আরও লিখেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা স্বাভাবিক নয়। সাধারণ মানুষের মতো কোনো আচরণ তারা করে না। আর এই অস্বাভাবিক আচরণ তাদের যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ প্রমাণিত হয়। ছবিতে আমাকে যে পিপিই পরে থাকতে দেখছেন, করোনা আক্রান্ত রোগী এই পরিস্থিতিতে সাধারণত কোনো মানুষকে দেখছে। যখন আমরা থাকছি না, তখন রোগী একাই থাকছে। সে কারণে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে করোনা রোগীরা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না।

Advertisement

ওই নার্স আরও লিখেছেন, আমার হৃদয় মর্মাহত। খুব খারাপ লাগছে এই রোগীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। সেই সঙ্গে তাদের চোখেমুখে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা লক্ষ করছি। রোগীদের পরিবারের লোকজনকে আসতে দেয়া হচ্ছে না। আবার তাদের লাইফ সাপোর্টে নেয়া হলেও আরেক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। এই দুঃসময় মানসিক শক্তি অনেক বেশি দরকার। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেই মানসিক শক্তি নিজের থেকেই তৈরি করে নিতে হচ্ছে। আর তাকে এতে সহায়তা করছে নার্স ও ডাক্তাররা।

জেক স্যাভই লিখেছেন, হাসপাতালের সব কর্মীই করোনা আক্রান্ত রোগীদের কেবিনে প্রবেশ করতেই এক ধরনের ভয় পাচ্ছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা ক্লান্ত। আমাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। তারপরও আমরা এই সংকটের মধ্যে কাজ করে যাব। পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমরা প্রতিটা দিনই রোগীদের জন্য লড়াই করব। তবে দয়া করে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হয়ে নিজে এবং অন্যদের আক্রান্ত করে আমাদের লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলবেন না।

বিএ/পিআর