আন্তর্জাতিক

তাবলিগ জামাতের ১২ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মামলা ভারতে

তাবলিগ জামাতের সদস্য ১২ বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে (বিদেশি আইনে) মামলা দায়ের করেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ। এই ১২ বাংলাদেশি দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিনের তাবলিত জামাতে অংশ নিয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রদেশেটির শামলি জেলার একটি তাবলিগ মসজিদে অবস্থান করছিলেন।

Advertisement

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের মামাল হওয়া এই ১২ বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত দুইজন ইতোমধ্যেই করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। বাকিদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, এখন শুধু পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।

উত্তরপ্রদেশের শামলি জেলার পুলিশ প্রধান ভিনিত জয়সোয়াল বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করার পর এই বিদেশি নাগরিকরা ‘বেআইনিভাবে’ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন, এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, যে দুজন বাংলাদেশি নাগরিক ইতোমধ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন, তাদের ঝিনঝিনা নামক এলাকার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বিশেষভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে।

Advertisement

দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়াও ভারতের আসাম প্রদেশের একজন তাবলিগ সদস্যও করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে তাদের সঙ্গে একই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। বাকি ১০ জন বাংলাদেশিকে নিকটবর্তী ভাওয়ান শহরের একটি সরকারি কলেজ ভবনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সদর দফতর ‘বাংলাওয়ালি মসজিদ’ বা ‘মারকাজ নিজামুদ্দিনে’ গত মার্চ মাসের যে জমাত নিয়ে ভারতে এখন বিতর্কের ঝড় বইছে, এরা সবাই সেই সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন।

মারকাজ নিজামুদ্দিনের ওই জামাতকে দেশটির সরকার ইতোমধ্যেই ভারতে করোনাভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম প্রধান ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাবলিগের প্রধান মাওলানা সাদ কান্দহালভিও এখনও পর্যন্ত ফেরার হয়ে আছেন।

দিল্লির ওই জামাতে অংশ নিয়ে তাবলিগের শত শত সদস্য, যার মধ্যে ভারতীয় ছাড়াও আরও অন্তত ২০টি দেশের নাগরিকও ছিলেন, তারা ধর্মপ্রচারের কাজে ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাদের সবার খোঁজে এবং তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, সেটা জানতে এখনও গোটা দেশ জুড়ে ব্যাপক ‘ম্যানহান্ট’ চলছে।

Advertisement

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত জেলা শামলি দেশটির রাজধানী দিল্লি থেকে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার দূরে। শামলি জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ১২ বাংলাদেশি ও আসামের একজন বাসিন্দাকে নিয়ে তাবলিগের ১৩ জনের ওই দলটি শামলিতে এসে পৌঁছায় গত ১৭ই মার্চ।

শামলির জেলা প্রশাসক যশজিৎ কাউর বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘তাবলিগের ওই দলটি ভেসানি গ্রামের এক মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দিল্লির মারকাজ নিয়ে সারা দেশ জুড়ে হইচই শুরু হওয়ার পর প্রশাসন ওই মসজিদে খোঁজ নিতে গেলে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করি এবং তাদের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রক করে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেই পরীক্ষায় অন্তত ২ জন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয় করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।’

এরমধ্যে গত শনিবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশ শামলি জেলার ভাওয়ান থানাতে ১২ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জামাতের যে সদস্যরা অসহযোগিতা করছেন বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার ইতোমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মতো কড়া আইন প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের এই কঠোর নীতির অংশ হিসেবেই ১২ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া হল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আগেই জানিয়েছে, যে বিদেশিরা পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকে তাবলিগ জামাতে অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে কালো তালিকাভুক্ত করে ভারতে প্রবেশ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কয়েকদিন আগে হরিয়ানা রাজ্যের পালওয়ালেও একটি মসজিদে দিল্লির মারকাজ থেকে ফেরা তিনজন বাংলাদেশি নাগরিককে পাওয়া যায়। তবে তাদের বিরুদ্ধে ওই রাজ্যের বিজেপি সরকার কোনো এফআইআর দায়ের করেছে বলে এখনো জানা যায়নি।

এসএ