বিশ্বে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই আছে ইউরোপের দেশ স্পেন, ইতালি এবং জার্মানি। সংক্রমণের শীর্ষে থাকলেও ইউরোপের অন্য দুই দেশের তুলনায় জার্মানিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা একেবারেই তলানিতে। কীভাবে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে প্রাণহানিতে লাগাম টানতে সক্ষম হলো জার্মানি?
Advertisement
ইউরোপের একাধিক দেশে করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবা অব্যাহত থাকলেও জার্মানিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো সংক্রমণ কমে এসেছে রোববারও। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় দেড়শ কম।
দেশটির সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট বলছে, জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ টানা তৃতীয়দিনের মতা কমেছে। দেশটিতে রোববার নতুন করে আরও ৫ হাজার ৯৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯১ হাজার ৭১৪ জনে পৌঁছেছে। এর আগে শনিবার দেশটিতে ৬ হাজার ৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একদিনের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ১৪৬।
আগের দিন শুক্রবার জার্মানিতে করোনায় আক্রান্ত হন ৬ হাজার ১৭৪ জন। তবে রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮৪ জন। এ নিয়ে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা এক হাজার ৩৪২ জনে দাঁড়িয়েছে।
Advertisement
এখন পর্যন্ত ইউরোপে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে থাকা ইতালি এবং স্পেনের পরই আছে জার্মানি। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯২ হাজার হলেও মারা গেছেন মাত্র এক হাজার ৩৪২ জন। অপরদিকে স্পেন এবং ইতালিতে সংক্রমণের সংখ্যা জার্মানির চেয়ে সামান্য বেশি হলেও ইউরোপের এই দেশ দুটি করোনায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
স্পেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৯ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১২ হাজার ৪১৮ জন। অন্যদিকে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২ হলেও মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৩৬২। তবে সংক্রমণের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে আক্রান্ত ৩ লাখ ১১ হাজার ৬৩৭ এবং মারা গেছেন ৮ হাজার ৪৫৪ জন। জার্মানির আল্ম ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজির পরিচালক ডা. ডিয়েট্রিক রথেনবাচার বলেন, জার্মানিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ এখানে গণহারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। অন্যরা যখন লক্ষণ রয়েছে এমন মানুষের পরীক্ষা করছে; তখন জার্মানিতে ব্যাপক পরিসরে করোনার পরীক্ষা চলছে।
বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় জার্মানির অবস্থান চতুর্থ। তারপরও দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম। দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য অনেক দেশে পরীক্ষা না করানোর কারণে দ্রুত বিস্তার ঘটছে; যেটি জার্মানিতে হচ্ছে না।
জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৬০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে ইতালিতে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের কিছু বেশি। এছাড়া স্পেনে ৩ লাখ ৫৫ হাজার। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক চিকিৎসক লিয়াম স্মিথ বলেন, করোনায় মৃত্যুর হার একেক দেশে একেক রকম হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে।
Advertisement
তবে অন্যতম কারণ হচ্ছে, কে কত বেশি পরীক্ষা করছে। বেশি পরীক্ষার কারণে সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়াতে পারছে না। জার্মানি জনসংখ্যার তুলনায় একেবারে শুরু থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করে আসছে। জার্মানির সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট লোথার উইলার বলেছেন, জার্মানির ল্যাবগুলোতে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের পরীক্ষা করার সক্ষমতা আছে।
চীনের উহানে গত ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হওয়ার পর জার্মানিই প্রথম দেশ হিসেবে স্থানীয়ভাবে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি করে। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশটির বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে এই কিট উৎপাদনের অনুমতি দেয়া হয়। তারা দেশটির জনসংখ্যার চিত্র মাথায় রেখে এই কিটের গণউৎপাদনে যায়। এমনকি দেশটির একটি মাত্র কোম্পানিই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১৪ লাখের বেশি কিট সরবরাহ করে। যা পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়া ইতালি এবং স্পেনের তুলনায় জার্মানিতে আইসিউ শয্যার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেশি আছে। যে কারণে দেশটির হাসপাতালগুলো রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ভেঙে পড়েনি; যা ঘটেছে স্পেন এবং ইতালিতে। জার্মানির হাসপাতাল পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ডিকেজি বলছে, জার্মানিতে এক লাখ মানুষের জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার শয্যা আছে ২৯.২ টি। অন্যদিকে, ইতালির এই সংখ্যা মাত্র সাড়ে ১২টি। যুক্তরাষ্ট্রে আছে ৩৪ দশমিক ২টি। কিন্তু জার্মানির এই শয্যাগুলোতে বর্তমানে রোগী আছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য জার্মানির এই শয্যা পর্যাপ্ত।
সূত্র: রয়টার্স, টাইম।
এসআইএস/এমএস