চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, আটার পর করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে এবার রাজধানীর বাজারে বেড়েছে শুকনা মরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে শুকনা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
Advertisement
এর আগে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে দেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বাড়ে সয়াবিন তেল, মশুর ডাল ও আটার দাম।
এক শ্রেণির মুনাফা লোভি ব্যবসায়ী করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে এভাবে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা বলছেন, এ দুর্যোগের সময় পণ্যের দাম বাড়ানো অনৈতিক। সরকারের উচিত দ্রুত এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
রোববার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে। আর আমদানি করা শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে।
Advertisement
মরিচের দামের বিষয়ে মালিবাগের ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মরিচের দাম বেড়েছে। হঠাৎ মরিচের দাম বৃদ্ধির সঠিক কোনো কারণ আমরা জানি না। তবে পাইকাররা বলছেন-আমদানি করা শুকনা মরিচ আসছে না। এ কারণে শুকনা মরিচের সরবরাহ কমেছে। এ কারণেই দাম বাড়তি।
রামপুরার ব্যবসায়ী শিপলু বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসায়ী। পণ্যের দাম বৃদ্ধি বা কমা আমাদের ওপর নির্ভর করে না। কোনো কিছুর দাম বাড়লে আমরাও বিব্রত হয়। কিন্তু বেশি দামে পণ্য কিনলে, বিক্রি তো বেশি দামেই করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। এ বাজারে শুকনা মরিচের দাম আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা হওয়া যুক্তিসংগত মনে করি না।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মানিক বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আতঙ্ক ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চালের দাম বেড়ে গেল। এরপর আটা, তেল, ডাল, আদা, রসুনের দাম বেড়েছে। এখন শুকনা মরিচে দাম বাড়ল। এভাবে দাম বাড়ানো অনৈতিক।
Advertisement
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরাবিশ্ব যেখানে মানবিক বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে আমাদের কিছু ব্যবসায়ী মুনাফা হাতানোর পাঁয়তারা করছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার পণ্যের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যারা দাম বাড়াচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় দেয়া উচিত না।
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চালের দাম বেড়ে যায়। এরপর চালের দাম আর কমেনি। এখন মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল ৬০-৬৮ টাকা, পাইজাম ও লতা ৫০-৬০ টাকা কেজি এবং স্বর্ণ ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে মিনিকেট ও নাজিরশাল ৫৪-৫৮ টাকা, পাইজাম ও লতা ৪২-৪৮ টাকা এবং স্বর্ণা ৩২-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
চালের দাম বৃদ্ধির পর দাম বাড়ে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম। খুচরা বাজারে লুজ সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর এক লিটারের বোতল সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া করোনা আতঙ্কে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে আটা, মশুরের ডাল, রসুন ও আদা। ২৮-৩২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। ৮৫-৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি দানার মশুরের ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১০০-১১০ টাকা। বড় দানার মশুরের ৭৫-৮৫ টাকা হয়েছে। আর ছোট দানার মশুরের ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০-১৩০ টাকার মধ্যে।
করোনা আতঙ্কের আগে ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা। আর ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকা। ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ -১৭০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।
চাল, ডাল, আটা, তেল, শুকনা মরিচ, আদা, রসুনের দামে এমন অস্বস্তি থাকলেও করোনা আতঙ্কের মধ্যে সবজির দাম নতুন করে বাড়েনি। আগের মতোই করলা ৪০-৫০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০ টাকা, শসা ২০-৩০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, পাকা টমেটো ২০-৪০ টাকা, শিম ২০-৪০ টাকা, গাজর ২০-৩০ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা, বেগুন ২০-৪০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরার বাসিন্দা রতন বলেন, সাধারণ মানুষ আর কৃষকরা সব সময় ধরা খায়। কৃষক ধানের দাম পায় না। কিন্তু কৃষকের কাছ থেকে ধন চলে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা ঠিকই চলের দাম বাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ বাড়তি দামে সেই চাল কিনে খায়।
তিনি বলেন, এখন করোনা ভাইরাসের মধ্যে যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে খোঁজ নিয়ে দেখেন একটাও কৃষকের হাতে নেই। যারা এসব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন তারা আগেই কৃষকের কাছ থেকে এসব পণ্য কিনে নিয়েছেন। এখন মানুষের আতঙ্ককে পুঁজি করে তারা একের পর এক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন।
এমএএস/এএইচ/পিআর