আর কদিন পরই মে দিবস। মে দিবসে শ্রমিক অধিকার নিয়ে নানা কথা উচ্চারিত হবে। কিন্তু শ্রমিকের অধিকার যে আমাদের দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত নয় সেটি আবারও প্রমাণিত হলো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ ঘোষণার সঙ্গে পোশাক কারখানাগুলোও ছুটি দেয়া হয়। কিন্তু সরকার সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করলেও এবার কারখানা বন্ধের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো ঘোষণা আসেনি। তাই ৫ এপ্রিল (রোববার) থেকে কারখানাগুলো খুলবে, এমন নির্দেশনায় ঢাকা অভিমুখে স্রোত নামে মানুষের।
Advertisement
সংক্রমণ রোধে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায় কাজ করলেও এভাবে শ্রমিকদের ঢাকামুখী স্রোত সমালোচনার সৃষ্টি করে। একদিকে মানুষজনকে হোম কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে অন্যদিকে পোশাক কারখানা খোলা রাখার ঘোষণা দেয়া হলো- কেন এই বৈপরীত্য তাহলে কি মালিকের লাভ ও লোভের বলি হবে শ্রমিকরা? সমালোচনার মুখে এখন আবার কারখানা বন্ধ হলো। তাহলে শ্রমিকদের সাথে এই নিষ্ঠুর তামাশার মানে কী?
শ্রমিকরা বেতন-ভাতা ও চাকরি হারানোর ভয়ে ঢাকায় ছুটে এসেছে। তাদের জীবনের দিকে তোয়াক্কা করেনি। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটিকালীন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের যেন ছাঁটাই না করা, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই)।
চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে গত মাসে বাংলাদেশে রফতানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প কারখানাসহ প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কারখানা বন্ধ রয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৩২ লাখ শ্রমিক। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে লে অফ করে অর্থাৎ তাদের মূল বেতনের অর্ধেক পরিশোধ করে, তাদেরকে ছাঁটাই করে দেয়া হবে জানতে পেরেছে ডিআইএফই।
Advertisement
এ অবস্থায় যেসব কারখানা মালিক শ্রমিকদের ছাঁটাই করছেন বা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছেন, সেটা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয়, শিল্প পুলিশ, বিভাগীয় কর কমিশন, জেলা প্রশাসক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বরাবর একটি স্মারক চিঠি দিয়েছে সরকারের সংস্থাটি। আমরা আশা করবো এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হলেও এখনো রয়ে গেছে নানা অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা। কলকারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। যখন তখন চাকরিচ্যুতি, ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে মজুরির বৈষম্য, সঠিক কর্মপরিবেশ না থাকা, শ্রমিকনিরাপত্তার অভাবসহ রয়ে গেছে অনেক অসুবিধা।
প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমশক্তি দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়, তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বেসরকারি পর্যায়ে তিন থেকে চার লাখ। বাকিরা প্রায় বেকারই থেকে যায়। এ অবস্থায় সস্তায় শ্রমকেনার একটি প্রবণতা দেখা যায় মালিকদের মধ্যে। এতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনাদি থেকে বঞ্চিত হয়।
এবারও মে দিবসে নানা কথা উচ্চারিত হবে। অগ্নিউদগারী ভাষণও হবে শ্রমিকদের নিয়ে। কিন্তু শ্রমিকরা যে তিমিরে ছিল রয়ে যাবে সেখানেই। কিন্তু এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। শ্রমিকরা যাতে সত্যিকার অর্থেই তাদের ন্যায্য পাওনাদি পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক-মালিকের স্বার্থ এক ও অভিন্ন হতে হবে।
Advertisement
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট।harun_press@yahoo.com
এইচআর/বিএ/পিআর