হঠাৎ করে ধুপধাপ লাঠিপেটার শব্দ কানে ভেসে উঠল। ‘ওই পুলিশ’ বলেই সজোরে দৌড়ে পালাতে লাগলেন কয়েকজন যুবক। দু-একজনের গায়ে লাঠির আঘাত যে লেগেছে, তা ‘মাগো বাবাগো’ চিৎকার শুনেই বোঝা গেল।
Advertisement
মহল্লার মোড়ের একটি দোকানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তারা। রাত খুব একটা বেশি হয়নি। একটু আগেই এশার নামাজের আজান শেষ হয়েছে। বেরসিক পুলিশ পেছন থেকে এসে তাদের ধাওয়া দেয় ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে। এ দৃশ্যপট আজ (শনিবার) রাত ৮টার।
মাসখানেক আগেও যানজটের নগরীখ্যাত এই শহরে রাত ১২টার সময় পাড়া-মহল্লার দোকানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিলেও যেখানে পুলিশ কিছুই বলত না। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারের নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করতে নগরবাসীকে রাস্তায় গল্পগুজব ও ঘুরে বেড়াতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তাদের সহায়তায় শহরে টহল দিচ্ছেন সেনাসদস্যরা। দিনের বেলায় নগরীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে রীতিমতো টহল বসিয়ে যানবাহনের অবাধ চলাচল বন্ধ করছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে মামলাও হচ্ছে।
Advertisement
দিনের বেলায় নানা অজুহাতে কিছু মানুষ রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারলেও সন্ধ্যার পর থেকে আরও কঠোর নজরদারি শুরু হয়। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাটে জন ও যানচলাচল কমতে থাকে। সন্ধ্যা রাতের ঢাকাকে দেখে মনে হয় যেন এক ঘুমন্ত শহর।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নগরীর লালবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট ও রমনা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি খুবই কম। অধিকাংশ রাস্তায় ভাসমান কিছু হতদরিদ্র মানুষকে সাহায্য পাওয়ার আশায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
দূর থেকে ভেসে আসে কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক। মাঝে মাঝে রোগী নিয়ে দ্রুতবেগে অ্যাম্বুলেন্সকে ছুটতে দেখা যায়। পুলিশকে গাড়ি নিয়ে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে পর্যন্ত টহল দিতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে মাইকে সাবধানী বাণী বলতে শোনা যায়।
স্বাভাবিক সময়ে পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার আশেপাশে বেশ কিছু রেস্টুরেন্টে ভোজনরসিকরা খানিপিনার সাথে সাথে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট আড্ডার আসর জমিয়ে রাখতেন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাইদ খোকনের নির্দেশে বেশ কিছুদিন ধরে সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ। তাই সন্ধ্যার পর থেকে এসব এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করে।
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আশেপাশে টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চাঁনখারপুল ও পলাশী এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা চলত। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ থাকায় এসব এলাকা এখন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। শহরের প্রায় সব এলাকার চিত্র প্রায় অভিন্ন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ