এ প্রজন্মের মানুষের কাছে এমন বিপদ অচেনা।পৃথিবীতে বহুদিন আসেনি এমন বিপদ। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে মানুষ ঘরবন্দি। এতে ভাইরাসের প্রকোপ তো ঠেকানো যাচ্ছে, তবে যাদের জীবন চলে দিন এনে দিন খেয়ে তারা পড়েছেন মহাবিপদে। আবার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো অবলা ও আশ্রয়হীন প্রাণিগুলোও পড়েছে খাবার সংকটে। এ অবস্থায় রাজধানীর ক্ষুধার্ত প্রাণীদের পাশে দাঁড়িয়েছে রবিনহুড দ্য এনিমেল রেসকিউয়ার সংগঠনের একঝাঁক তরুণ-তরুণী। তারা বাসা থেকে স্বাস্থ্যসম্মত রান্না করা খাবার ও পানি নিয়ে রাস্তার ক্ষুধার্ত প্রাণীদের খাওয়াচ্ছেন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় অনেককে যোগ দিতে দেখা গেছে।
Advertisement
দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। যারা আছে তাদের প্রায় সবাই গৃহবন্দি অবস্থায়। যে কারণে রাস্তার কুকুর-বিড়ালগুলোর পেটে খাবার জুটছে না বলে তারা ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে। শহরের ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা আর মানুষের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে বেঁচে থাকলেও বর্তমানে আশ্রয়হীন প্রাণীগুলো তাও পাচ্ছে না। এসব প্রাণী অভুক্ত থেকে পেটে ক্ষুদার জ্বালা নিয়ে রাস্তার এদিক-ওদিক ঘুরঘুর করছে। ওদের কথা মাথায় রেখে প্রতিদিন সাংগঠনিকভাবে এ সংগঠনের তরুণ-তরুণীরা রান্না করা খাবার পরম মমতায় খাইয়ে দিচ্ছেন রাস্তার কুকুরদের।
এ তরুণ-তরুণীরা নিজেদের নিরাপত্তায় মাস্ক আর গ্লাভস পরে খাবারের ব্যাগ নিয়ে রোজ ছুটে চলছেন ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায়। খিলক্ষেত, ইস্কাটন গার্ডেন, ধানমন্ডি, গুলশান, জিয়া উদ্যান, সংসদ ভবন, হাতিরঝিলসহ অনেক এলাকায়। সংগঠনের টি-শার্ট পরে তাদের রাস্তার ক্ষুধার্ত প্রাণীদের পরম আদরে খাবার ও পানি খাওয়াতে দেখা গেছে।
রবিনহুড দ্য এনিমেল রেসকিউয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও মডেল আফজাল খান শনিবার জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকার প্রায় ১ কোটি মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরের খাবারের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় রাস্তার প্রাণীগুলো না খেয়ে দিন পার করছে। এমন কি এই গরমে প্রাণীগুলো পানি পর্যন্ত পাচ্ছে না।
Advertisement
তিনি বলেন, ক্ষুধার্ত প্রাণীদের কথা চিন্তা করে বাসা থেকে গাড়ি ভর্তি করে রান্না খাবার ও পানি নিয়ে ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায় শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কুকুর-বিড়ালদের খাওয়ানো হচ্ছে। এ কাজে সহায়তা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেক মডেল তারকাকে যুক্ত হতে দেখা গেছে। কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সব স্তরের মানুষের সার্বিক সহায়তা প্রত্যাশা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।
এ কাজের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন খিলগাঁও ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াহেদুল হাসান মিল্টন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রবিনহুডের এমন কার্যক্রম মহৎ, এ কারণে তাদের সহযোগিতার করার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, রাস্তার কুকুর-বিড়ালগুলো আমার এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় টন আবর্জনা খেয়ে পরিষ্কার করে পরিবেশ রক্ষা করতে সহায়তা করে। বর্তমানে শহর থেকে অনেক মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় প্রাণীগুলো খাওয়ার জন্য ময়লা-অবর্জনাও পাচ্ছে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ কাজে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
মডেল সেমন্তি সৌমিক বলেন, প্রাণীগুলো আমাদের একটি অংশ। তারা পরিবেশ রক্ষা করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি লকডাউন পরিস্থিতিতেও ক্ষুধার্ত প্রাণীদের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে অনেক আনন্দিত বলে জানান।
Advertisement
এমএইচএম/এনএফ/এমকেএইচ