দেশজুড়ে

পোল্ট্রি ব্যবসায় ধস, ক্রেতা খুঁজছেন খামারিরা

‘ডিমের পিস চার টাকা, হালি ১৫ টাকা। তবুও বিক্রি নেই। ঘরে ডিম রাখার জায়গা নেই। ব্রয়লার মুরগির কেজি ৮০ টাকা। এরপরও বিক্রি নেই। প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা লোকসান। দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’

Advertisement

করোনা সংকটময় পরিস্থিতিতে এভাবেই পোল্ট্রি ব্যবসার বর্ণনা দিলেন সাতক্ষীরার তালা সদরের শিবপুর গ্রামের পোল্ট্রি খামারের মালিক ফজলুর রহমান মোড়ল।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমার খামারে ৪২০০ ডিম দেয়া মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন ৩৬০০-৩৭০০ ডিম দেয় মুরগিগুলো। ঘরে ২০ হাজার ডিম পড়ে আছে। রাখার জায়গা নেই। প্রতিদিন মুরগির খাবার, কর্মচারীর খরচ ধরে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আগে ২৪-২৫ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো প্রতিদিন। এখন ৫০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা।

ফজলুর রহমান মোড়ল বলেন, ব্রয়লার মুরগি রয়েছে দুই হাজার। বিক্রি করতে পারি না। হাটবাজার বন্ধ থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা মুরগি কিনছেন না। মাঝে মধ্যে এলাকার কেউ ২-৫ কেজি কিনে নেন। এমন অবস্থা শুধু আমার নয়; সব খামার ব্যবসায়ীরা করোনা পরিস্থিতিতে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।

Advertisement

করোনা পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়া পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, সরকার এই মুহূর্তে যদি খামার ব্যবসায়ীদের পাশে না দাঁড়ায় আমরা শেষ হয়ে যাব।

সাতক্ষীরার বড় বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন। দিনে ৪০-৫০ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি করতেন তিনি। এখন দিনে দুই হাজার টাকারও মুরগি বিক্রি হচ্ছে না তার।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, দিনে এখন দুই হাজার টাকারও মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায় ধস নেমেছে। দোকানের ৬-৭ জন কর্মচারী। তাদের বেতন দিতে হবে পকেট থেকে। করোনা পরিস্থিতিতে লোকসানে পড়েছি আমরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় পোল্ট্রি খামার রয়েছে ২৯২২টি। প্রত্যেকটি খামারের চিত্র একই। কোনো কেনাবেচা নেই। ব্যবসায় ধস নেমেছে সবার।

Advertisement

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, খামারিদের মুরগি বাজারজাতকরণ বা পরিবহন ও কেনাবেচায় কোনো সমস্যা নেই। মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা রয়েছে। কেনাবেচা করতে পারবেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ক্রেতারা কেউ মুরগি বা ডিম কিনছেন না। না কেনার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, অনেক খামারির সঙ্গে কথা বলেছি। উৎপাদনের সমস্যা নেই। তবে ক্রেতা সংকট রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় যদি খামারিদের সহযোগিতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয় সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহযোগিতা করা হবে।

আকরামুল ইসলাম/এএম/জেআইএম