তানভীর আহমেদ
Advertisement
করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে কিছু লোক বাড়িভাড়া মওকুফের আওয়াজ তুলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কার কাছে এই মওকুফ চাচ্ছেন, সরকারের কাছে নাকি ব্যক্তি পর্যায়ের নাগরিকের কাছে? ব্যক্তিবিশেষের টাকা পরিশোধ না করাকে কোনোভাবেই মওকুফ বলা যাবে না। ব্যক্তি পর্যায়ে কে ছাড় দেবে আর কে দেবে না এটি ওই ব্যক্তির ওপর নির্ভর করছে।
ব্যক্তিগত বাড়ি সরকারের সম্পদ নয় তাই সরকার কখনোই ভাড়া মওকুফ করতে পারে না। বরং মওকুফ চাইলে সরকারের কাছে চাইতে পারেন। যেন সরকার আপনাদের বাড়িভাড়া দিয়ে দেয়। বাড়িভাড়া তো দূরের কথা, আগে দেখেন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বিল মওকুফ করাতে পারেন কিনা। যেখানে সরকার এই এপ্রিল থেকে পানির বিল বৃদ্ধি করেছে ৩০% সেই সাথে বিদ্যুৎ বিলও বাড়িয়েছে অনেক। গত ডিসেম্বরে পানির বিল ইউনিটপ্রতি ছিল ১১ টাকা। এই এপ্রিল থেকে সেই ইউনিটপ্রতি বিল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪.৪৬ টাকা।
বাস্তবে এগুলো সরকারের পক্ষে মওকুফ করা সম্ভব নয়। কারণ এটা বাংলাদেশ, কানাডা নয়। সরকারের সেই সামর্থ্যও নেই। গত কয়েক দিন আগে সরকার পোশাকশিল্পের জন্য প্রণোদনা দিয়েছে ৫০০০ কোটি টাকা। কী মনে হয় ফ্রিতে দিচ্ছে? জি না ফ্রিতে নয়, ২% ইন্টারেস্টসহ মূল টাকা ফেরত দিতে হবে।
Advertisement
অফিস বন্ধ, কাজে যাচ্ছেন না তাই বলে কি বেতন নেয়া বন্ধ করবেন? অবশ্যই নয়। আপনার বাচ্চার স্কুল বন্ধ তাই বলে কি স্কুলের বেতন দেবেন না? অবশ্যই দেবেন। অথচ আপনি বাসায় থাকবেন কিন্তু বাসাভাড়া দেবেন না তা হতে পারে না। আপনি বাসাভাড়া দিতে না পারলে গ্রামের বাড়ি চলে যান। অনেক দিনমজুর গ্রামের বাড়ি চলে গেছে এই ভাড়ার কথা চিন্তা করে। যারা অধিকাংশই বস্তিতে থাকে। গুলশান, উত্তরা, বনানী, ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় অর্ধলক্ষ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন এমন ভাড়াটিয়ার সংখ্যা লক্ষ লক্ষ।
অধিকাংশ বাড়ির মালিক বলতে গেলে ৯০% মালিক ব্যাংক থেকে লোণ নিয়ে তাদের বাড়ি করেছে। এই লোন সে বাসাভাড়া তুলেই পরিশোধ করে। এই কিস্তির টাকা হাজার কোটির কম হবে না। ঋণের যে কিস্তির টাকা বাড়ির মালিক ব্যাংকে পরিশোধ করে সেই টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলো তার কর্মীদের বেতন দেয়। প্রত্যেকটি বিষয়ে একটি শৃঙ্খলা রয়েছে। এটি চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না।
২০১৪ সালে বিএনপির অবরোধের সময় দেশ প্রায় ৪ মাস কার্যত লকডাউন ছিল। আর এখন ১৫ দিন পার না হতেই কিছু দুষ্টচক্র বাড়িভাড়া মওকুফ মওকুফ বলে আওয়াজ তুলে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। দেশ লকডাউন হতে পারে এই আশঙ্কায় ঢাকাবাসী ওষুধের দোকান, মুদির দোকান খালি করে ফেলতে পারে কিন্তু বাড়িভাড়া দিতে তাদের যত কষ্ট। অথচ লক্ষ লক্ষ বাড়ির মালিক আছেন যারা শুধু এই বাড়িভাড়া দিয়ে তাদের সংসার পরিচালনা করেন।
সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি যদি এই বিষয়ে কথা বলেও থাকে, মনে রাখবেন এটি কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। হাজার নয় এর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা হবে। তাই বাড়িভাড়া মওকুফের চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।
Advertisement
এইচআর/বিএ/এমকেএইচ