রাষ্ট্রীয় নেতাদের দূরদর্শিতা এবং প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার অভাবেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাসের মহামারি। সময়মতো প্রস্তুতি ও কার্যকর ব্যবস্থা নিলে সারাবিশ্বকে আজ আর এমন সংকটে পড়তে হতো না বলে মনে করেন মার্কিন শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সমাজ সমালোচক ও লেখক নোয়াম চমস্কি।
Advertisement
সম্প্রতি ক্রোয়েশিয়ার দার্শনিক ও লেখক সার্কো হর্ভাটের সঙ্গে অনলাইনে আলাপ হয় চমস্কির। এদিন করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মহামারি ঠেকানো যেত, সেরকম তথ্যও ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে আগেই ধারণা পেয়েছিল। তারপরও কিছুই করা হয়নি। আসন্ন বিপদের কথা জেনেও তাদের অবহেলার কারণেই করোনা সংকট আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
চমস্কি বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর চীনারা নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবহিত করেছিল। সপ্তাহখানেক পর বিজ্ঞানীরা একে করোনাভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর থেকেই তারা এ বিষয়ে বিশ্বকে একের পর এক তথ্য দিতে থাকেন। তারপরও ওই সময় কিছু ভাইরোলজিস্টসহ অন্যরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তারা জানতেন, সামনে এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে হবে। তবুও কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?’
মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের প্রশংসা করেন এ মার্কিন বুদ্ধিজীবী। তবে এতে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনা করেন ইউরোপীয় দেশগুলোর।
Advertisement
তিনি বলেন, জার্মানি অনেকটা স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেদের বাঁচাতেই পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তারা রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়েছে। বাকিরা তেমন কিছুই করেনি, এর খেসারত দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র- যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক সপ্তাহেই করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন নোয়াম চমস্কি। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘সোশিয়োপ্যাথিক জোকার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিন বললেন, এটা কোনো সমস্যাই নয়, এটা সাধারণ ফ্লুর মতো। পরের দিন বললেন, এখন ভয়াবহ সংকটের সময় আর আমি এসব জানতাম। এর পরের দিন তিনিই আবার বলেন, সবাইকে সবার কাজে ফিরতে হবে। কারণ, আমার নির্বাচনে জিততে হবে।
করোনা সংকট নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমরা একটা বিপর্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছি। মানবজাতির ইতিহাসে এর চেয়ে বাজে সময় আর আসেনি। আমরা বিশাল এক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছি। একটি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ, অন্যটি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি।’
রাত শেষে যেমন দিন আসে, তেমনি এই সংকট কাটিয়ে আবারও বিশ্ব ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস চমস্কির। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের একটা ভালো দিক থাকতে পারে। মানুষ এখন চিন্তা করবে ,আমরা কেমন পৃথিবী চাই। সংকটের গুরুত্ব বুঝতে হবে। ভাবতে হবে কেন এই করোনাভাইরাস সংকট?’
Advertisement
করোনাভাইরাসের এই সংকট থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে নোয়াম চমস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পোলিও মহামারি আটকানো গিয়েছিল সাল্ক ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফলে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কার করা ভ্যাকসিনটি ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে বাজারে ছাড়া হয়েছিল। কোনো পেটেন্ট নেই, সেটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। এবারও এমন কিছু করা সম্ভব।
কেএএ/এমএস