জাতীয়

যাতায়াত বাসা-মসজিদ, মিরপুরে মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত কীভাবে?

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজন মারা গেছেন। এই দুইজনের মধ্যে একজনের বাসা রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর সেকশন এলাকায়। তার বয়স ৬৮ বছর। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। অবসরের পর থেকে তিনি তেমন বাড়ি থেকে বের হতেন না। যেতেন কেবল মসজিদে।

Advertisement

তার মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, কেবল বাসা আর মসজিদে যাতায়াতে থেকে তিনি কীভাবে করোনায় সংক্রমিত হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর ওই বৃদ্ধ মিরপুর-১১ নম্বরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তারা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শপত্র দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন।

তার বড় ছেলে জাগো নিউজকে বলেন, বাবার গত ২৬ মার্চ থেকে প্রচুর পরিমাণে হেঁচকি দেখা যায়। তখন তাকে আমরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তারা বাবাকে দেখে নাপা এবং আরেকটা ঠান্ডার ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেন। তারপর হেঁচকির পরিমাণ বাড়তে থাকলে আমরা তাকে মিরপুরের (পূরবী বাসস্ট্যান্ডের পাশে) ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। তখন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল থেকে বাবার ‘করোনা হয়েছে’ এমন সন্দেহে তারা আমাদের আবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলেন।

Advertisement

‘২ এপ্রিল বাবার শরীর বেশি খারাপ হয়। হেঁচকির সঙ্গে জ্বর দেখা দেয়। আমরা তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। কুর্মিটোলার চিকিৎসকরা বাবাকে প্রথমে ভর্তি নিতে চাননি। তবে আমরা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসকের রেফারেন্স দেখালে তারা ভর্তি নেন এবং করোনা টেস্ট করেন। পরদিন ৩ তারিখ শুক্রবার সকালে টেস্টে বাবার করোনা ধরা পড়ে, তবে দুপুরেই তিনি মারা যান।’

তার বাবার সাথে কোনো বিদেশফেরত ব্যক্তির যোগাযোগ বা আনাগোনা ছিল কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় আসাতো দূরের কথা, আমাদের পরিবারের কেউ বিদেশেও নেই। তাছাড়া বাবা অবসরের পর সারাদিন বাসায়ই থাকতেন। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য বাসার পাশের মসজিদুত তাইয়্যিবা’তে যেতেন।

মসজিদ বা রাস্তার কারও সংস্পর্শে গিয়েই তার বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

মসজিদুত তাইয়্যিবা’ মিরপুর-১১ এর নম্বর ১১/বি সেকশনের লেন-২ এ অবস্থিত। মসজিদের সঙ্গেই একটি মাদরাসা ও এতিমখানা রয়েছে।

Advertisement

মারা যাওয়া ব্যক্তির করোনায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য না দিলেও শনিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর জানায়, তারা সংক্রমিত হওয়ার কারণ ইনভেস্টিগেট (জানার চেষ্টা) করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের মাধ্যমে প্রথমে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আমরা দেখেছি যে ওই সদস্যদের সাথেও যারা ওঠাবসা করেন তারাও সংক্রমিত হয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে অবশ্যই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যায়। তবে আমাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা কিন্তু এখনো অনেক বেশি নয়। আমরা পরিস্থিতি এখনো বুঝিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অবশ্যই বলতে পারি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, তবে এটা সীমিত আকারে।

জানা যায়, মারা যাওয়া ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ, ঢাকায় মিরপুরের বাড়িতে থাকছিলেন পরিবারের সঙ্গে। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তাকে তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১১ সালে তার হার্টে রিং পড়ানো হয়।

এ বিষয়ে মিরপুর থানা জানায়, মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ির সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে আরও দুজন মারা গেছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন আরও চারজন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩০।

এআর/এইচএ/জেআইএম