আন্তর্জাতিক

অসুস্থদের বাঁচাতে এবার নতুন যুদ্ধে করোনাজয়ীরা

করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠে সবেই কোয়ারেন্টাইনমুক্ত হয়েছেন ডায়ানা বেরেন্ট। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন যুদ্ধে নাম লেখাতে ব্যাকুল হয়ে আছেন তিনি। করোনা থেকে যারা সেরে উঠছেন তাদের শরীরের অ্যান্টিবডি এখন গবেষকদের অন্যতম ভরসা। তারা মনে করছেন, এই অ্যান্টিবডিই করোনাকে নির্মূলের প্রধান উপায় হতে পারে। সেই অমূল্য অ্যান্টিবডি দেয়ার জন্যই ডায়ানার এমন ব্যাকুলতা।

Advertisement

মধ্য-মার্চের এক সকালে নিজের নিউইয়র্কের বাড়িতে ঘুম থেকে ওঠে ডায়ানা দেখেন, তার শরীরে ১০২ ডিগ্রি জ্বর। সঙ্গে গলা ও বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। এরপর পরীক্ষায় দেখা গেলো, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এলাকায় তারই প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। তারপর হাসপাতালে গেছেন। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ডায়ানা সুস্থ হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছেন।

সেই ডায়ানাই নিউইয়র্কের প্রথম সেরে ওঠা রোগী, যিনি কি-না অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য গবেষকদের অ্যান্টিবডি দেয়ার প্রক্রিয়ায় নাম লিখিয়েছেন।

এর আগে ইবোলা ও সার্সের মতো ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা ব্যবহার সুফল দিয়েছিল বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসে। প্লাজমা আক্রান্ত রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, যাতে তার দেহ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে।

Advertisement

অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের আশার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন এই অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা করোনা রোগীদের শরীরে দিয়ে পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে। পরীক্ষা সফল হলে প্রায় আড়াই লাখ করোনা আক্রান্ত রোগীতে দিশেহারা যুক্তরাষ্ট্র আশার আলো দেখতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ ও বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিউইয়র্ক ব্লাড সেন্টারের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ব্রুস সাশিয়াস এ বিষয়ে বলেন, এই দুর্বিপাক কাটিয়ে উঠতে প্লাজমা থেরাপি কাজ করতে পারে আশা থাকলেও আসলে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে এক্ষেত্রে আমরা একেবারেই যে নতুন, সেটা সবার মাথায় রাখা গুরুত্বর্ণ।

এই অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইরভিং মেডিকেল সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এলডাড হোড ও স্টিভেন স্পিটালনিক। তারা আশাবাদী হলেও কাজের ক্ষেত্রটি নতুন বলে সাবধানী সাশিয়াসের মতোই।

স্পিটালনিক জানান, সংক্রমণ ঘটার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগীদের শরীরে প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু হবে এবং সেটা এক পর্যায়ে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। তবে তারা জানেন না যে, ঠিক কতো দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

Advertisement

তিনি বলেন, কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে সংক্রমণ-পরবর্তী ২৮ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে। তবে আমাদের নতুন গবেষণা এক্ষেত্রে স্পষ্ট চিত্র দেখাতে পারে।

হোড বলেন, এই পরীক্ষা সফল হলে প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিবডি তিন থেকে চারটি প্রাণ বাঁচাতে পারবে। এখন প্রাথমিক লক্ষ্য, পর্যাপ্ত প্লাজমা সংগ্রহ যার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণা চালানো যায়।

করোনার কারণে সৃষ্ট এই মানবিক সংকটে গবেষকদের ভরসা দিয়ে ৪৫ বছর বয়সী ডায়ানা বলছেন, আমাদের এই প্রক্রিয়া প্রাণরক্ষাকারী হবে বলে আমরা আশাবাদী। নিজেরা এগিয়ে এলে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে সুপারহিরো হয়ে উঠতে পার্রি।

তিনি বলেন, এটা এক নজিরবিহীন লড়াইয়ের সময়, যেখানে সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কেবল আমরা যারা সুস্থ হয়ে গেছি, তারাই এভাবে এগিয়ে আসতে পারি।

নিজে অ্যান্টিবডি দেয়ার পাশাপাশি করোনা থেকে সুস্থ অন্যদেরও অ্যান্টিবডি সংগ্রহে ‘সার্ভাইভর কর্পস’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেছেন ডায়ানা, যেখানে ১৭ হাজার সদস্য রয়েছেন। সেখানে সুস্থ রোগীদের অ্যান্টিবডি দেয়ার প্রচারণা চলছে জোরেশোরে।

এরই মধ্যে একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীর দেহে প্লাজমা দিয়েছে হিউস্টনের একটি হসপিটাল। যদিও সেই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা প্রমাণে আরও সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোড বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহযোগিতার মানসিকতা এনে দিয়েছে। আমি মনে করি এখন বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই তাদের ইগোকে দূরে ঠেলে অভিন্ন এক সমাধান (করোনা প্রতিরোধ) পেতে কাজ করছেন। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানই জিতে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এইচএ/পিআর