বিশেষ প্রতিবেদন

বদলে গেছে ডিএসসিসির জোড়পুকুর মাঠ

কিছুদিন আগেও খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন মাঠের প্রবেশ পথে ছিল মস্তবড় ময়লার উন্মুক্ত ডাস্টবিন। যে কারণে সব সময় প্রকট দুর্গন্ধ পোহাতে হতো মাঠ সংলগ্ন আশপাশের এলাকাবাসীকে। এছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যেত। শুধু তাই নয় মাঠের পাশে উন্মুক্ত স্থানটিতে ছিল সিএনজি লেগুনার স্ট্যান্ড।

Advertisement

কিন্তু এ দৃশ্য এখন আর নেই, বদলে গেছে জোড়পুকুর মাঠ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জোড়পুকুর খেলার মাঠকে নতুন রূপে সাজিয়ে এলাকাবাসীকে প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে শিশুদের হৈ-হুল্লোড়, খেলাধুলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে শিশু-কিশোরসহ স্থানীয় সব বয়সীদের চিত্তবিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মাঠটি।

খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন জোড়পুকুর মাঠটির চারদিকে ১৬ ফুট লোহার নেটের প্রাচীর। রোপণ করা হয়েছে সবুজ ঘাস। চারপাশে হাঁটার জন্য বিস্তীর্ণ ওয়াকওয়ে এবং বসার জন্য মার্বেল টাইলসের বেঞ্চ। বেঞ্চকে ঘিরে নানান প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।

ফুটবল খেলার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে মাঠটি। রাতে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভেতরে ২৪টি ও বাইরে ২৪টি এলইডি লাইট বসিয়েছে ডিএসসিসি। পাশেই নেটে ক্রিকেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থাও রয়েছে। ওয়াকওয়ের নিচে গভীর ড্রেনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জমা হওয়া পানি ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে মাঠের ঘাসে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৬৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৭ মিটার প্রস্থ আয়তনের মাঠটি সংস্কারে ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। মাঠের এক কোণে তৈরি হচ্ছে শিশুদের জন্য আলাদা জোন। তাদের খেলার জন্য দোলনা ও সিঁড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ থাকবে এতে। মাঠ সংলগ্ন একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের পাশাপাশি রাখা হবে সিসি ক্যামেরা।

এছাড়া মাঠের একপাশে স্থাপন করা হয়েছে কফি হাউজ। এখানে সবাই বসবে, আড্ডা দেবে, আর এখানকার আয় দিয়ে মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পুরো মাঠ পরিচালনার জন্য স্থানীয়দের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় এমন সাজানো-নয়নাভিরাম মাঠ উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে এলাকাবাসীকে। সেই উচ্ছ্বাস জাগো নিউজের কাছে প্রকাশ করছিলেন এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন।

তিনি বলেন, এক সময় মাঠটি অযত্নে-অবহেলায় ছিল। কিন্তু ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের উদ্যোগে মাঠটি পুরোপুরি বদলে গেছে। এটি এখন মনোরম রূপ পেয়েছে। এমন নয়নাভিরাম মাঠ যে আমরা পাবো, সে কথা কখনো চিন্তাও করিনি। মাঠটি সব বয়সীদের ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে।

Advertisement

মাঠ সংলগ্ন আরেক এলাকাবাসী, দুই সন্তানের জননী রেবেকা ইসলাম বলেন, জোড়পুকুর মাঠের সামনে আগে ময়লার ডাস্টবিন ছিল। যেখানে প্রকট দুর্গন্ধ থাকতো,পাশেই ছিল লেগুনা স্ট্যান্ড। এই পথ দিয়ে আমরা হাঁটতেই পারতাম না।

কিন্তু পার্কটি নতুন রূপ পাওয়ায় মাঠে আজ আমাদের সন্তানরা ছোটাছুটি করতে পারছে, খেলতে পারছে। পাশাপাশি সব বয়সীদের ব্যবহারের উপযোগী করে মাঠটি তৈরি করা হয়েছে। এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং মেয়র সাঈদ খোকনকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

মাঠের বিষয়ে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এক সময় এ মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। আমরা এটি বদলে দিতে কাজ করেছি। আরও কিছুটা কাজ বাকি আছে। এ অবস্থায় জোড়পুকুর মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। খেলার মাঠটি সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয়দের দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। আমাদের জল-সবুজে ঢাকা প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এরই মধ্যে অনেক মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

জানা গেছে, ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি ৩০ শতাংশ বহন করে ডিএসসিসি।

ডিএসসিসি সূত্র আরও জানায়, এলাকায় মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে গ্রহণ করা জল-সবুজে ঢাকা প্রকল্পের আওতায় ৩১টি মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়ন করেন রফিক আযমের নেতৃত্বে ৭০ স্থপতি। মাঠগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য খুলেও দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি মাঠ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালেই (আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হচ্ছে।

প্রকল্পভুক্ত পার্ক ও মাঠগুলোর মধ্যে জোড়পুকুর মাঠ ছাড়াও রয়েছে মতিঝিলের সিরাজ উদ্দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, রসুলবাগ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্ক।

প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে যা থাকছে

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে সুযোগ-সুবিধা থাকছে। কোনো কোনোটিতে এলইডি লাইটিং, কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, কার পার্কিং, জাদুঘর, পাঠাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনী। গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্যও থাকছে। ফলে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা হয়ে উঠছে একেকটি মাঠ ও পার্ক।

এএস/এএইচ/পিআর