শেরপুরের নকলায় আমন মৌসুমে বাজিমাত করেছে এবার ‘নেরিকা মিউট্যান্ট’ ধান। কৃষকরা এবার প্রতি একরে ৫২/৫৩ মণ করে ফলন পেয়েছেন। মাত্র ১শ দিনেই নেরিকা মিউট্যান্ট ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারায় তারা মহাখুশি। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাঝেও এ জাতটি নিয়ে দারুণ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। নকলা উপজেলার খিচা গ্রামের কৃষক আবুল কাসেমের ১০ কাঠা (৫ শতক=১ কাঠা) জমিতে আবাদ করা নেরিকা মিউট্যান্ট জাতের ধান কাটা হয়। কাটা ধান মাড়াই করে শুকনা অবস্থায় (১৪ শতাংশ আর্দ্রতা) হিসেব করে দেখা যায় ফলন মিলেছে একর প্রতি ৫৩ মণ করে। এসময় স্থানীয় কৃষকরা ছাড়াও নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ সুলতান উদ্দিন, মো. শাহাবুদ্দিন, মো. আতিকুর রহমান, রেজাউল করিম, সিআইজি কৃষক সমিতির সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কৃষক আবুল কাসেম বলেন, আমদের দেশীয় অন্যান্য জাতের চাইতে এই ধান আগেই পাকে। পাশের ক্ষেতে একসঙ্গে দেশি জাতের ধান লাগাইছিলাম। সেইগুলোতে এখন থোর ধরছে কেবল। আর নেরিকা মিউট্যান্ট ধান পেকে যাওয়ায় কাটতে হলো। সার-তেলের খরচও তেমন নাই, রোগবালাইও কম। মাত্র ১শ দিনে ধান ঘরে তুলতে পেরে আমি খুশি।টালকি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গত মঙ্গলবার নকলার টালকি গ্রামের কৃষক জুলহাস উদ্দিনের ক্ষেতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) একটি গবেষণা ট্রায়াল প্লটের নেরিকা মিউট্যান্ট জাতের ধান কেটে একরে ৫২ মণ করে ফলন পাওয়া যায়। এসময় ব্রির পরিচালক (প্রশাসন) ড. শাহজাহান কবীর এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রির বিজ্ঞানীরা নেরিকা মিউট্যান্ট জাতের ধানটি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়ায় নিজস্ব জাত হিসেবে অনুমোদনের চিন্তা-ভাবনা করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর আগ্রহে ২০০৯ সালে আফ্রিকার উগান্ডা থেকে ৬০ গ্রাম নেরিকা জাতের ধানের বীজ এনে প্রথম বাংলাদেশে এর চাষ শুরু হয়। খরা সহিঞ্চু, সেচ কম লাগে এবং আউশ, আমন ও বোরো সব মৌসুমেই চাষ করা যায়। এর জীবনকালও কম, মাত্র ৯০ থেকে ১শ দিন। কৃষকের মাঠে প্রাকৃতিক শংকরায়নের মাধ্যমে নেরিকা মিউট্যান্ট জাতটি পাওয়া গেছে। এখন নতুন জাতের নেরিকা মিউট্যান্ট ধানটি আগামী দিনে একটি সম্ভবনাময় জাত হিসেবে সব মৌসুমে চাষ করা সম্ভব।নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর জাগো নিউজকে বলেন, নেরিকা মিউট্যান্ট ধান আবাদে খরচও কম, সেচ-সারও কম লাগে। এটি আউশ, আমন, বোরো এ তিন মৌসুমেই আবাদ করা যায়। কৃষক নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করতে পারেন। তিন মৌসুমে এ ধান আবাদের পর দুুটি ফসলের মাঝে সবজি, রবি শস্য কিংবা অন্য আরকেটি ফসল আবাদ করা যায়। এতে একই জমিতে একাধিক ফসল আবাদ করায় শস্যের নিবিড়তা যেমন বাড়ে, তেমনি কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। সেজন্য কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মাঝে এ জাতটি নিয়ে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরাও কৃষকদেরকে এ ধান চাষে উৎসাহিত করছি এবং নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।হাকিম বাবুল/এমজেড/এমএস
Advertisement